আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধবিধ্বস্ত দক্ষিণ ইয়েমেনের শিশুদের পুষ্টিহীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে জাতিসংঘ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ক্রমেই ভয়ানক খাদ্য সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে ইয়েমেন।

এ পুষ্টিহীনতার জন্য মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাব, আর্থিক মন্দা, বন্যা, দেশটিতে চলমান সংঘাত এবং চলতি বছর তাৎপর্যপূর্ণভাবে মানবিক সহায়তা কমে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে চলতি বছর খাদ্যের জন্য হাহাকার আরও তীব্র হয়েছে।

জাতিসংঘের ইয়েমেন বিষয়ক মানবিক সমন্বয়কারী লিজা গ্রেনডে বলেছেন, ‘আমরা গত জুলাই থেকে সতর্ক করে আসছি যে, ইয়েমেন বিপর্যয়কর খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে। এখনই যদি চলমান যুদ্ধ শেষ না হয়, তাহলে বলতে হয় আমরা এমন একটা অবস্থার দিকে যাচ্ছি যেখান থেকে আগের অবস্থায় ফিরে আসা অসম্ভব। তার মতে, বর্তমান অবস্থায় ইয়েমেনের তরুণ একটি প্রজন্ম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

দক্ষিণ ইয়েমেনের শিশুদের অপুষ্টি বিষয়ক এই জরিপের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে এসে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পুষ্টিহীনতার সংখ্যা ১০ শতাংশে ঠেকেছে, যা সংখ্যায় অর্ধ মিলিয়ন বা পাঁচ লাখেরও বেশি।

ইউনিসেফের ইয়েমেন প্রতিনিধি ফিলিপ্পে ডুয়ামেল্লে আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘শিশুরা এই বয়সে পুষ্টিহীনতার শিকার হলে মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হয় এবং এটা তাদের স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। এটা আসলেই ভয়ঙ্কর ঘটনা।’

জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, ইয়েমেনের ১৫.৫ শতাংশ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। শুধু তাই নয়, দেশটির এক মিলিয়নের চতুর্থাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই লাখ গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়ের অপুষ্টির চিকিৎসা দরকার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দক্ষিণ ইয়েমেনের প্রায় ১৪ লাখ শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম।

তবে ইরান-সমর্থিত হুথি যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রিত উত্তর ইয়েমেনের শিশুদের অপুষ্টির তথ্য এই প্রতিবেদনে উঠে আসেনি।

তবে ইয়েমেনে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত্ আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেনি ইয়েমেন সরকার।

জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে মানবিক সংকটে ভুগছে ইয়েমেন। দেশটির ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ করার পর থেকে অস্থিতিশীল বিরাজ করছে দেশটিতে।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০২০)