স্টাফ রিপোর্টার : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, আসামিদের করা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জরিমানা স্থগিত করেছেন আদালত।

এদিকে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর শুনানির জন্য গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে আগামী রবিবার (১ নভেম্বর) আইনজীবীরা উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। তবে ৬ আসামির বাকি দুজন আপিল করলেও তাদের বিষয়ে কোনো আদেশ হয়েছে কি না- এ তথ্য পাওয়া যায়নি।

তিন আসামির পৃথক আপিল আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওই তিন আসামি হলেন- আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মো. হাসান এবং মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়। এ তিন জনের আপিল অ্যাডমিটেড (শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন)। পাশাপাশি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দেয়া জরিমানা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

মিন্নির আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম জানিয়েছেন, তারাও এই আদালতে রোববার আপিলটি উপস্থাপন করবেন। বাকি দুই আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত ও রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী আপিলের আবেদন করলেও কোনো আদেশ হয়েছে কি না- তা জানা যায়নি।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। খালাস দেয়া হয়েছে ৪ জনকে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খাঁন হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। পাশাপাশি এ ৬ আসামির ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেন আদালত।

খালাস পেয়েছেন— মো. মুসা (পলাতক), রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

পরে নিয়ম অনুযায়ী গত ৪ অক্টোবর ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা আপিল করেন। এরপরে গত ১৩ অক্টোবর আপিল আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেন আদালত।

আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডের রায় হলে ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। এ জন্য সংশ্লিষ্ট আদালত মামলার সব নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে থাকেন। যা ডেথ রেফারেন্স হিসেবে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হওয়ার পরে শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে, কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয় বলেও জানা গেছে।

২০১৯ সালের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড, মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী এবং তাদের সহযোগীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ/ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।

পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।

হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

একই বছরের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নিকে জামিন দেন। ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক, দুভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। বিচারিক আদালত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এছাড়া বাকি ৪ আসামিকে খালাস দেন।

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিচার-

গত ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। বিচার শেষে ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। রায়ে ৬ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৪ জনকে ৫ বছর এবং একজনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। বাকি ৩ জনকে খালাস দেন আদালত।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৮, ২০২০)