তদন্তে মাঠে নেমেছেন পুলিশ সুপার
কেন্দুয়ায় কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) : কেন্দুয়ায় কলেজ ছাত্রী জুই আক্তারের আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় অবশেষে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হয়েছেন জুই আক্তারের প্রেমিক পুলিশের সদস্য মো: সাইফুল্লাহ তারেক। মামলাটির খুটিনাটি বিষয় দেখতে তদন্তে মাঠে নেমেছেন নেত্রকোণার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী।
বুধবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর তিনি কেন্দুয়া উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের গড়াদিয়াকান্দা গ্রামে মামলার বাদী কলেজ ছাত্রী জুই আক্তারের মা আসমা আক্তার, মামলার অন্যান্য স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসা বাদ ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উপজেলার গড়াডোবা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে মো: সাইফুল্লাহ তারেক একই ইউনিয়নের গাড়াদিয়াকান্দা গ্রামের রতন আহম্মেদের কন্যা জুই আক্তারের সঙ্গে স্কুল জীবন থেকেই প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। জুই আক্তারের মা আসমা আক্তার জানান, স্কুলে আসা যাওয়ার পথে সাইফুল্লাহ তারেক তার কন্যাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে নানাভাবে উত্যক্ত করত। এ বিষয়টি সাইফুল্লাহ তারেকের অভিভাবকের নিকট বারবার অভিযোগ করেও কোন ফল হয়নি। অবশেষে জুই আক্তারের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে প্রেম সম্পর্ক গড়ে তোলেন সাইফুল্লাহ তারেক।
এক পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশে চাকুরি হয় সাইফুল্লাহ তারেকের। কিন্তু পুলিশের চাকুরি হওয়ার পর থেকেই সাইফুল্লাহ তারেক জুই আক্তারের সঙ্গে নানান তাল বাহানা শুরু করেন। প্রেম করে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অবশেষে সটকে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি জুই আক্তার। চলতি বছরের ১৯ আগষ্ট নিজ বাড়িতে বসত ঘরে ধরনার সঙ্গে ফাস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন জুই। এ ঘটনায় কেন্দুয়া থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলাও হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এদিকে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে জুই আক্তারের মা আসমা আক্তার সাইফুল্লাহ তারেক সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে কেন্দুয়া থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ খান জানান, ওই মামলার প্রধান আসামী মো: সাইফুল্লাহ তারেক ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে কর্মরত থাকায় তার বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নেত্রকোণা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার বরাবর গত ৪ সেপ্টেম্বর আবেদন করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, মামলাটি সব দিক থেকেই খুটিনাটি বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এজন্য ওই কলেজ ছাত্রীর হাতের লিখা সংগ্রহ করে সি আই ডির হস্তবিশারদ বরাবর পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে ২৪ সেপ্টেম্বর মো: সাইফুল্লাহ তারেক কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে নিজের পরিচয় গোপন রেখে নেত্রকোণা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন।
জুই আক্তারের চাচা আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে বলেন, মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য পুলিশের সদস্য মো: সাইফুল্লাহ তারেক সহ তার নিকট আত্মীয়রা মামলার বাদী আসমা আক্তার সহ আমাকেও নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছেন। এ ঘটনায় তিনি ২৯ আগষ্ট কেন্দুয়া থানায় একটি জিডি করেন। নেত্রকোণা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুঠোফোনে এ মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার প্রধান আসামী পুলিশের সদস্য মো: সাইফুল্লাহ তারেক কে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখন মামলাটির দুটো দিক সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কলেজ ছাত্রী জুই আক্তার আত্মহত্যার আগে তার হাতের লিখা একটি চিরকুট, অপরটি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। তদন্তকারী কর্মকর্তা চিরকুট সংগ্রহ করে তার স্কুল কলেজের হাতের লেখা সংগ্রহের পর সি আই ডির হস্তবিশারদ বরাবর পাঠিয়েছেন। অপরদিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট কি আসে তা চুলছেড়া বিশ্লেষন করা হবে। হাতের লিখা এক হলে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।
(এসবি/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০২০)