বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের শরণখোলায় পঞ্চম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের মামলার যুক্তিতর্ক শেষে আগামী ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন কার্য তালিকায় রেখেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। 

সোমবার বিকেলে বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম মামলার আসামী ইলিয়াছের উপস্থিতিতে বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে এই ঘোষণা দেন।

এই মামলায় বাদী পক্ষে ১৫ জন এবং আসামী পক্ষে দু’জন মিলিয়ে মোট ১৭জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন বিচারক।
ধর্ষনের শিকার মাদ্রাসা ছাত্রী শরণখোলা উপজেলার উত্তর খোন্তাকাটা গ্রামে বাড়ী ও একই গ্রামের রাশিদিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।

এরআগে গত ১৯ অক্টোবর এই আদালত মাত্র সাত কর্মদিবসে জেলার মোংলা উপজেলার মাকড়ডোন এলাকার সাত বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণের দায়ে আব্দুল মান্নান সরদার নামে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়।

এই ধর্ষণ মামলায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার (৪৮) একাই আসামী। তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর খোন্তাকাটা রাশিদিয়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার সুপার এবং একই উপজেলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের আব্দুল গফফার জোমাদ্দারের ছেলে।

আলোচিত এই মামলার বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারি কৌসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, ২০১৯ সালের ৮ আগষ্ট সকাল সাতটায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রতিদিনের মত পঞ্চম শ্রেণির চার ছাত্রী মাদ্রাসায় মাদ্রাসা সুপারের কাছে আরবি শিক্ষা নিতে যায়। পৌনে আটটার দিকে মাদ্রাসার সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দার এক ছাত্রীকে রেখে অন্য তিনজনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পরে তিনি ওই ছাত্রীকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিতে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

এই ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে মেয়েটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ। অসুস্থ অবস্থায় মেয়েটি মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে বাড়িতে যেয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। অসুস্থ হয়ে পড়া মেয়েটিকে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা দেয়া হয়। এই ঘটনার এগারোদিন পর ১৯ আগষ্ট মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াস জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন।

এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেয়া হলে পিবিআই এর উপ পরিদর্শক (এসআই) আবু সাইয়েদ তদন্তে নামেন। তিনি তদন্তে নেমে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানো মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ জোমাদ্দারকে ঘটনার প্রায় দুই মাস পরে ওই বছরের ১৭ অক্টোবর জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছ ধর্ষণের কথা স্বীকার করে তিনদিন পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইয়েদ তদন্ত শেষে ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে ১৩ নভেম্বর মাদ্রাসা সুপার ইলিয়াছের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেন। এরপর আদালতের বিচারক মামলাটিকে আমলে নিয়ে ২০২০ সালের ৯ মার্চ চার্জ গঠন করে। মার্চে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে আদালতের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।

বর্তমানে আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবরের মধ্যে আদালতের বিচারক চিকিৎসক, পুলিশ, বাদী ও বিবাদী মিলিয়ে মোট ১৭ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। গতকাল এই মামলার বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের বিচারক আগামী ৫ নভেম্বর রায় ঘোষণার দিন কার্য তালিকায় রেখেছেন।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২০)