স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা : আজ শনিবার দুপুরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইটিভির অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ‘একুশের চোখ’র ক্যামেরাম্যানসহ ৬ সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের ইন্টার্নি ডাক্তাররা। সেই সঙ্গে তাদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা, বুম ও মোবাইল ভাঙচুর করা হয়েছে।

আহতরা হলেন একুশের চোখের প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন, নুরুন্নবি, জুলহাস কবির, ক্যামেরাম্যান হুমায়ুন কবির টিটু, মনিরুল ইসলাম মনির ও রুমি হাসান।

একুশের চোখের রিপোর্টার জুলহাস কবির জানান, সকালের দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ নম্বর বেডে ভর্তিরত এক যক্ষারোগীকে দেখতে যান একুশের চোখের প্রতিবেদক ইলিয়াস হোসেন ও ক্যামেরাম্যান মনিরুল ইসলাম। পরে ওই রোগীর ওজন মাপার জন্য ডাক্তারের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।

তখন ওই দুই সাংবাদিককে ডাক্তাররা বলেন, আপনারা বাইরে যান। পরে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে ইন্টার্নি ডাক্তাররা ওই রোগীকে বকাবকি করতে থাকেন। তারা বলেন, হাসপাতালে সাংবাদিক নিয়ে এসেছো কেন।

বিষয়টি বুঝতে পেরে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একপর্যায়ে দুই সাংবাদিককে আটক করে টেনেহিঁছড়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হোসেনের রুমে নিয়ে যায়।

সেখানে পরিচালকের সমানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ও বুম ভেঙে ফেলে কয়েকজন ইন্টার্নি ডাক্তার। ক্যামেরাম্যান মনিরুল ইসলাম ও ইলিয়াস সেখানে থেকেই বিষয়টি অফিসকে জানানোর চেষ্টা করলে পরিচালক নিজেই তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তা ভেঙে ফেলেন।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দিল্লীপ কুমার ইন্টার্নি ডাক্তারদের সহযোগিতায় ওই সাংবাদিকদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিতে চান। তিনি এসময় সাংবাদিকদের বলতে থাকেন, তোরা লেখ, আমাদের কোনো ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়নি। সেই সঙ্গে আমাদের কোনো মারধর করা হয়নি। সাংবাদিকরা এতে অস্বীকৃতি জানান।

পরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অন্য একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিনিধি একুশে টেলিভিশনে সংবাদ পাঠান। বিষয়টি টের পেয়ে ওই প্রতিনিধিকেও মারধর করে ইন্টার্নি ডাক্তাররা।

সেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান একুশে টেলিভিশনের চিফ রিপোর্টার মাহাথির ফারুকী, সিএনই ইব্রাহীম আজাদ ও এজিএম তারেক তাবিব। এসময় তাদেরকেও নাজেহাল করা হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ডাক্তাররা। একপর্যায়ে বিষয়টি যখন কোনোভাবেই সমাধান হচ্ছিল না তখন মাহাথি ফারুকী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবসহ উচ্চপর্যায়ে ফোন দেন।

এরপর ওপর থেকে পরিচালক জাকির হোসেনের কাছে ফোন আসে। ফোন পেয়ে পরিচালক কিছুটা নমনীয় হন। পরে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শনের (বিএমএ) প্রতিনিধি ডাক্তার মো. আবুল হাসেম খান বিষয়টি তদরাকি করতে আসেন।

বিকেলের দিকে র‌্যাব ও কোতোয়ালী থানা পুলিশের সহায়তায় অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের সেখান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়।

এদিকে গুরুতর আহত ৬ সাংবাদিককে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইটিভির চিফ রিপোর্টার মাহাথি ফারুকী জানান, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঘটনার সময় দুইটি ক্যামেরা গায়েব এবং হাসপাতাল এলকায় সাংবাদিকের উপর হামলার বিষয়ে মামলা করা হবে।

(ওএস/অ/এপ্রিল ১৯, ২০১৪)