স্টাফ রিপোর্টার : সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ঘাটে গুঁড়ো দুধের কারখানা স্থাপন ও পরীক্ষামূলক উৎপাদন কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কারখানায় কর্মরত ভারত, জার্মানি, ইতালি ও লিথুনিয়ার প্রকৌশলীরা করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ায় প্রকল্পের কাজ থেমে যায়।

তারা এখনও না ফেরায় যথাসময়ে এই কারখানার কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই খরচ বাড়ানো ছাড়াও প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

‘সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা যায়। গত ১৪ অক্টোবর পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এর সচিব মো. রেজাউল আহসানের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা) সভার আয়োজন করে।

প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম সভায় মিল্কভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) মো. শরিফুল ইসলাম তালুকদার জানান, ‘সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িঘাটে গুঁড়ো দুগ্ধ কারখানা স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় দরপত্রের মাধ্যমে কেনা মেশিনারিজের সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান এসএসপি প্রাইভেট লিমিটেড চিঠি দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মেশিনারিজ শিপমেন্ট, ইন্সটলেশন, কমিশনিং ও পরীক্ষামূলক উৎপাদনের মেয়াদ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে। এসব কাজ সময় বাড়ানো ছাড়া শেষ করা সম্ভব নয়।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এসএসপি প্রাইভেট লিমিটেডের পাঠানো চিঠি ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ বরাবর পাঠানো হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পরিকল্পনা কমিশনকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ গত ২৫ অক্টোবর চিঠি দিয়েছে।

সভায় শরিফুল ইসলাম তালুকদার আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কেনা মেশিনারিজ ইন্সটলেশন, কমিশনিং ও পরীক্ষামূলক উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে করোনার কারণে দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা আসায় প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং ভারতীয় প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ানরা তাদের দেশে ফিরে যান। ফলে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ইনস্টলেশন ও কমিশনিংয়ের কাজ বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে জার্মানি, ইতালি, লিথুনিয়া ও ভারত থেকে কোনো প্রকৌশলী/টেকনিশিয়ান আসতে পারছেন না। এ অবস্থায় প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ জরুরি ভিত্তিতে আরও এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির আরও কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রকল্পের আওতায় মিল্কভিটার অর্থায়নে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা খরচে ল্যাবরেটরি স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে এই কাজের দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। তাই এই কাজ শেষ করার জন্যও প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়ানো প্রয়োজন।

২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির চতুর্থ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘মিল্কভিটার নিজস্ব অর্থায়নে সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হবে’ বলে নির্দেশনা আছে। কিন্তু করোনার কারণে প্রকল্পের মেশিন স্থাপনের কার্যক্রম যথাসময়ে সমাপ্ত না হওয়ার কারণে সোলার প্যানেল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করাও সম্ভব হয়নি।

ওই স্টিয়ারিং কমিটির সভার আলোচনায় প্রকল্পের আওতায় কেনা গাড়ির জ্বালানি, যানবাহন মেরামত ও দায়িত্ব ভাতার জন্য ১০ লাখ টাকা মিল্কভিটার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করার বিষয়ে আলোচনা হলেও, সিদ্ধান্ত না আসায় ব্যয় নির্বাহে বিপত্তি দেখা দিয়েছে বলেও সভায় জানানো হয়।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৬, ২০২০)