শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে পরিবেশের পরম বন্ধু,পাখির রাজ্যে চলছে এখন অস্তিত্বের লড়াই। ফল-ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ, উপযুক্ত আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম পাখি। জেলার পাখির অভয়াশ্রম  ভাটিনা পাখি কলোনিতেও পাখি কমে গেছে। সেখানে আর গাছে, মাঠে-ঘাটে, খেতে-খামারে চোখে পড়েনা হরেক রকম পাখিদের বিচরণ। ভেসে আসে না আর সুমধুর সুর। পাখি হারিয়ে যাওয়ায় হুমকি’র মুখে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্য।

“ডাকে পাখি খোল আঁখি
দেখ সোনালী আকাশ
বহে ভোরেরও বাতাস।”

এখন আর পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে নাদিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের। টুনটুনির কিচির-মিচির ডাক, কোকিল.ঘুঘু,বউ কথা কও পাখি’র সুমধুর সুরে আর এ অঞ্চলের মানুষেরমন ভরেনা। চোখে পড়েনা আর হরেক রকম পাখির আনাগোনা।এমনি কথা জানালেন, পাখি প্রেমি হাজী সাইফুল ইসলাম। মোটর গ্যারেজের মালিক হাজী সাইফুল এখন এই পাখি ঠিকিয়ে রাখতে নিজের গ্রামের বাড়ি’র আশপাশের বিভিন্ন গাছে, কলস ও ডালি বেঁধে দিয়েছেন।
এক সময় দিনাজপুরের সদর উপজেলার নিভৃত পল্লী ভাটিনায় প্রকৃতির অপরূপ খেয়ালে বাসা বেধে ছিলো হাজার হাজার শামুক ভাঙ্গা পাখি।

গ্রামের পুকুরপাড়ের বাশঝাড় আর বিভিন্ন গাছ ছিলো তাদের স্থায়ী আবাসস্থল। এখারেই বাসা বেঁধে প্রজনন হতো অসংখ্য পাখির ছানা।পাখি দেখার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসতো দর্শনার্থীরা। এরা আশপাশেই শামুক ঝিনুক খেয়ে জীবন ধারণ করতো। সন্ধার আগেই সব পাখি ফিরে আসতো আবাসস্থলে। এই পাখিগুলো অঞ্চলভেদে শামুক ভাঙ্গা, শামুক খৈল, এশিয়ান ওপেন বিল, ওপেন বিল ষ্টক ও হাইতোলা মূখ নামে পরিচিত। শামুক ভাঙ্গা পাখির পাশাপাশি এখানে বাস করতো আরো বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি।

ভাটিনা গ্রামের পাখিপ্রেমি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেমের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি জানান,পাখির অভয়াশ্রম ভাটিনা পাখি কলোনিতেও পাখি এখন কমে গেছে। এখানে আর গাছে, মাঠে-ঘাটে, খেতে-খামারে চোখে পড়েনা হরেক রকম পাখিদের বিচরণ। আগের মতো আর ভেসে আসেনা সুমধুর সুর।যদিও পাখির অভারণ্য আবাস স্থলে ভাটিনাকে অগেই আগে থেকেই ঘোষণা করা হয়েছে। গাছে, গাছে, কলস টানিয়ে দেয়া হয়েছে। পাখি শিকার আইনত দন্ডলীয় সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে, এ এলাকার কয়েকটি স্থানে। তারপরও আর নেই আগের মতো পাখি।

এই ভাটিনা পাখি কলোনির প্রায় ২৫ বছরের ঐতিহ্য এখন হারিয়ে যেতে বসেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বলেন, ফল-ফসলে কীটনাশক প্রয়োগ ও খাদ্যের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, দেশীয় প্রজাতির হরেক রকম পাখি ।পাখিপ্রেমি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসেম এই পাখি টিকিয়ে রাখতে সরকারের সুদৃষ্টি দেয়ার পাশাপাশি তিনি জনসচেতনতার তাগিদ দেন।

পরিবেশবিদ রোটারিয়ার এস.এম.আব্দুস সালাম তুহিন জানান, শালিক, কোকিল, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, টুনটুনি, কাঠঠোকরা, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস,বক, ক্যাসমেচি, বাবুই, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাঁচা,কাক ও চিলসহ বিভিন্ন পাখিদের আবাস ছিল দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে। এখন আর এসব পাখি খুব একটা দেখা যায় না।পাখি কমে যাওয়ার কারণ, খেতে কীটনাশকের অপব্যবহার, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে বন-জঙ্গল নিধন ও পাখি শিকার। উপযুক্ত আবাসস্থল ও খাদ্যের অভাবে দেশীয় প্রজাতির অনেক পাখি এখন হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন্ এই পরিবেশবিদ।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকে এসব দেশি পাখির সাথে পরিচিত না। তারা এসব পাখির নামও জানেনা। পাখির অভারণ্য পাখি কলোনিতে কিছু পাখি দেখা গেলেও দেশি পাখিগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।

সরজমিনে দেখা গেছে, পাখির অভয়ারণ্য আবাসভুমিগুলো এখন পাখি শূণ্য হয়ে পড়েছে। প্রকৃতি’র পরম বন্ধু এই পাখি নানাবিধ কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই পাখি টিকিয়ে রাখার তাগিদ দিচ্ছেন, প্রকৃতি প্রেমি ও পরিবেশবিদরা।

(এস/এসপি/নভেম্বর ০৬, ২০২০)