রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : দুধ উৎপাদন, বিপনন, গো-খাদ্য, ঔষধ ও উপকরণ ক্রয়-বিক্রয়ে যত অনিয়মের মধ্যেই চলছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের মিল্কভিটা দুগ্ধ শীতলীকরণ ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র। এখানকার তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার ফরহাদুল আলম গত ৪ বছরে প্রতিষ্ঠানটির কোটি টাকার উপরে লোপাট করেছেন বলে খামারীদের অভিযোগ। মিল্কভিটার প্রধান কার্যালয়ের দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি অভিযোগের তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সনের জুলাই থেকে ২০১৭ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিষের কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পে সরকার সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ও মিল্কভিটা অনুদান দেয় ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। ২০১৫ সনে দুগ্ধ শীতলীকরণ কারখানাটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে এখানে কারখানা ছাড়াও রয়েছে ২০৬টি মহিষ। তন্মধ্যে ১০৪টি মা, ষাড় ৫টি ও বকনা বাছুর ১০৬টি। ৭০টি দুগ্ধ সমিতির মধ্যে চলমান রয়েছে ৩৩টি। প্রতিদিন এখন প্রায় দেড়শ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। প্রতিদিন প্রায় ৬শ’ কেজি দানাদার খাদ্য ও প্রায় ১২শ’ কেজি খড় লাগে।

রায়পুরের খামার সমিতির সভাপতিদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, এ তত্বাবধায়ক এখানে যোগদানের পর থেকে নিজের ইচ্ছেমত খড়কুটো ক্রয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়ম করেন। ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর দু'শ লিটার মহিষের দুধ বাইরে ব্যাক্তি পর্যায়ে বিক্রয়ের টাকা আত্মসাত করেন। ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান সরেজমিন আসলে তদন্তে ধরা পড়লে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই টাকা জমা দেয়া হয়। মহিষ প্রজনন কেন্দ্রের জন্য বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ক্রয়ের নামে-বেনামে ভাউচারের মাধ্যমে তাআত্মসাত করেন। দুগ্ধ কারখানার জেনারেটরের তেল কেনার নামে ভুয়া ভাউচারে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকাআত্মসাত করেন।। উল্লেখিত ৪টি খাতসহ বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির অভিযোগ এনে তত্বাবধায়কের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) অপসারণসহ কারখানার দুগ্ধ সংগ্রহ চালুকরণের দাবিতে ৫ খামার সভাপতি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

খামার সভাপতিরা আরো জানান, তদন্ত কর্মকর্তা ৮'শ খালি ভাউচার, ২'শ ওষুধ ভাউচার, স্থানীয় মিতালিব াজারের ডাক্তার কমলের স্বাক্ষর করা ৩০টি খালি ভাউচার, ডিজেলের ২হাজার টাকার খালি ভাউচার, খড়ের মুল্য ১১ টাকা করে সাড়ে ৪ হাজার কেজির পরিবর্তে ১৪ টাকা করে সাড়ে ৭ হাজার টাকা ভাউচারে লেখা, ভ্যাট দেন বিক্রেতা, কিন্তু তিনি ভাউচার দেন ক্রেতার। দেড় বছর পর খামারিদের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০৪ লিটার দুধের দাম জমা দেয়া হয়। খুচরা দুধ বিক্রি করেন ও ৫০ হাজার টাকার খড় কেনা হলে ভাউচার করেন ৬৫ হাজার টাকা। উৎপাদন মূল্য থেকে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি ও বিক্রির টাকা ফান্ডে জমা না করে মিল্কভিটায় কোটি টাকার অনিয়ম ও লুটপাট করেছেন।

রায়পুরের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ডাক্তার ফরহাদুল আলম বলেন, আমি ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর যোগদান করি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচেছ। খড় ক্রেতাদের ভাউচার না থাকায় আমরা ভাউচার বানিয়ে নিতে হয়। খামারীদের অভিযোগের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তদন্ত চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি: (মিল্কভিটা)’র এডিশনাল জিএম (এডমিন) তোফায়েল আহাম্মদ বলেন, অভিযোগগুলোর বিষয়ে তিনিসহ দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি সরেজমিন কাজ করছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়ে কথা বলা যাবে না। সহসা চেয়ারম্যান বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

(পিকেআর/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০২০)