স্টাফ রিপোর্টার : বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকনাথের অনুসারী ও ভক্তরা ‘রাখের উপবাস’ পালন করছেন। ১৫ কার্তিকের পর মাসের বাকি সময়ের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার তারা এ ব্রত পালন করেন।

শনিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ নারী-পুরুষ প্রদীপ, ধুপ, ফল, ফুল সামনে নিয়ে একাগ্রচিত্তে লোকনাথের আরাধনায় নিমগ্ন।

এ বিষয়ে লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দিরের সেবাইত ও সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু পদ ভৌমিক বলেন, এই ব্রতের আগের দিন সংযম করতে হয়। তারপর উপবাস থেকে সন্ধ্যায় আগে ধুপ, প্রদীপ ইত্যাদি নিয়ে বসতে হবে। আরাধনায় বসে প্রদীপ জ্বলানোর সাথে সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতে হয়। সংযম, মনোব্রত ও মনটাকে একাত্মচিত্তে লোকনাথকে ডাকতে হয়। প্রদীপ যখন জ্বলা শেষ হবে, মন্দির থেকে চালকলা দিয়ে দেয়। সেই চালকলা পুণ্যার্থীরা খায়। অনেকে এই চাল রেখে দেয়, যখন বিপদ-আপদ আসে তখন খায়। আজকে শনিবার, তাই এখানে আজ সেই ব্রত চলছে।

এই ব্রত কীভাবে আসলো তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ১৮৯০ সালের আগে নারায়ণগঞ্জের বারদীর ঘটনা। লোকনাথ বাবা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন। একদিন ভোর বারদী আশ্রমের আশপাশ দিয়ে লোকনাথ হাঁটাচলা করছিলেন, তখন দেখেন লাল পের পরা এক নারী মন্দিরের সীমানা অতিক্রম করছেন। যেই মন্দির অতিক্রম করেন ওই নারী, তখন লোকনাথ বললেন, ‌‘আমি তো এখানে আছি’। তখন তিনি দেখলেন কমলা মা যাচ্ছেন। তখন লোকনাথ বুঝতে পারেন, এখন একটা অঘটন ঘটবে।

তখন গুটি বসন্তের প্রাদুর্ভাব ছিল। প্রচলিত সংস্কার অনুসারে লোকনাথ বললেন, ‘আপনি মন্দিরে যেতে পারবেন না, মন্দির আশ্রম এলাকার পাশ দিয়ে যান’। সেই পাশ দিয়ে বা নিম্নাঞ্চল দিয়ে বেরিয়ে যান কমলা দেবী। নিম্নাঞ্চলে বাস করতো কিছু জেলে পরিবার, তারা বসন্তে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই তখন প্রমাণ হয়, সাধনায় সিদ্ধিলাভ করলে দেবদেবতারা সাধকদের কথা মানে।

তখন আশ্রমের লোকজন বললেন, আপনি যখন থাকবেন না তখন আমাদের কী হবে? তখন লোকনাথ বললেন, ‘১৫ কার্তিকের পরের শনি ও মঙ্গলবার বিকেল ৪টার পরে তোমরা ব্রত করবে’। সেই ব্রতের কেউ নাম দিলেন রাখের উপবাস, কেউ বলে গোসাইয়ের উপবাস, কেউ বলে কার্তিক ব্রত। এই তিন নামে আখ্যায়িত। লোকনাথ সম্প্রদায় এটাকে গোসাইয়ের উপবাস হিসেবে মানে। গোসাইয়ের নামে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।

এই ব্রত আগে বারদীতে হতো। এই মন্দিরে এ ব্রত হতো না। বারদী থেকে এটা প্রচার হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই আশ্রমে এই আরাধনা শুরু করেছে। এখন সারাদেশেই লোকনাথের মন্দিরে এই ব্রত হচ্ছে। অনেকে বাসাতে বসেই এই ব্রত করছে বলেও জানান তিনি।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ০৭, ২০২০)