মো.আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে পাইকারী ও খুচরা শাক সবজির বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে, আকাশছোঁয়া শাক-সবজির দাম, নেই কমার কোন লক্ষণ। এতে করে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেনীর সাধারণ মানুষ। গত কয়েক সাপ্তাহ যাবত নিত্যপণ্যেসহ শাক সবজির বাজারে ক্রমাগত অস্থিরতা বিরাজ করছে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের মনিটরিং থাকলেও শাক সবজির অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি মনিটরিং করতে খুব একটা দেখা যায়নি ভ্রাম্যমান আদালত সংশ্লিষ্টদের। 

শাক সবজির দাম বৃদ্ধির কারনে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি বছর শীত আসার সাথে সাথে এমন সময়ে শতিকালীন শাক সবজিতে বাজার সয়লাব থাকলেও এবছর স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত শাক সবজি খুব একটা দেখা মিলছেনা, আর মিললেও দাম চড়া।

কৃষকরা বলছেন এবছর ফলন ভাল না হওয়ায় শাক সবজির দাম একটু বেশি। মৌলভীবাজার শহরের পাইকারী ও খুচরা বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি ও টমেটো। এক সাপ্তাহ আগে জেলা সদরের আশেপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা যে মুখি বাজারে পাওয়া যেতো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দরে সেটি এখন এক সাপ্তাহের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।

সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরের দিকে শহরের সবজির বাজারের পাইকারী আড়ৎ ও খুচরা সবজি দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি শসা আড়ৎ থেকে ৪০ টাকা দামে ক্রয় করা হলেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শষা বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকা কেজিতে। বেগুণ আড়ৎ থেকে ৪৫ টাকা দামে ক্রয় করে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। ফুলকপি ৮০ টাকা দামে ক্রয় করে বিক্রি করা হচ্ছে ১শত টাকা দামে। টমেটো ৬০-৬৫ টাকা দামে ক্রয় করে বিক্রি হচ্ছে ৭৫- থেকে ৮০ টাকা দামে। মূলা ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা দামে ক্রয় করে বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। তবে অন্যান্য দিনের তোলনায় কিছুটা কম আছে ধনিয়া পাতা ও কাচা মরিছের দাম। প্রতি কেজি কাচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে আর ধনিয়া পাতা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। শহরের বিসমিল্লাহ সবজি আড়ৎ, সুমন সবজি আড়ৎ, মেসার্স রাজু সবজি আড়ৎ, মেসার্স তাজুল সবজি ভান্ডার, মেসার্স শাহ খন্দকার সবজি ভান্ডার ও মেসার্স ফাহিম সবজি ভান্ডারসহ বেশ কয়েকটি পাইকারী সবজি আড়ৎ ও শহরের খুচরা সবজি বাজার ঘুরে শাক সবজির দাম বৃদ্ধির এমন ব্যবধান চোখে পড়ে।

এদিকে সরকার দেশব্যাপী খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম সর্বশেষ ৩০ টাকা পুনর্র্নিধারণ করলেও মৌলভীবাজারে বর্তমানে খুচরা বাজারে যে দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে তার সাথে সরকার নির্ধারিত দামের কোন মিল নেই। প্রতি কেজি আলু পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৩৯ টাকা কেজি দরে আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে।

জানতে চাইলে সুমন সবজি ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী শামীম মিয়া জানান, সরকার প্রতি কেজি আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে ৩০টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আমরা তো সেই দামে পাচ্ছিনা। ওই বাণিজ্যালয়ে রাজশাহী,রংপুর,বগুরা ও মুন্সিগঞ্জ থেকে আলু সংগ্রহ করা হলেও বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দামে এসব আলু ক্রয় করা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, আমরা ৩৯ টাকা পাইকারী কেজি দরেই বিক্রি করছি প্রতি কেজি আলু।

সর্বশেষ রবিবার (৮ নভেম্বর) জেলার শ্রীমঙ্গলে অতিরিক্ত মুল্যে পেঁয়াজ, রসুন আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয়ের অপরাধে ৭ টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে সর্বমোট ১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা আদায় করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: আল-আমিন এর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল শহরের পোস্ট অফিস সড়ক , পুরাতন বাজার, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি আলুর আড়ৎ গুলোতে মনিটরিং করা হয়। এসময় নির্ধারিত মূল্য থেকে অধিক দামে আলু বিক্রয় করা, ক্রয় ভাউচার সংগ্রহ না করা, বিক্রয় ভাউচার না দেওয়া, মূল্য তালিকা না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে এই জরিমানা আদায় করা হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো: আল-আমিন এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(একে/এসপি/নভেম্বর ০৯, ২০২০)