নাঈমুর রহমান ইমন


একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সমশ্রদ্ধা আর অধিকারের সুযোগ প্রদান করাই যুক্তিযুক্ত। যদি এর ব্যত্যয় হয়, তবে ধর্মীয় বিদ্বেষাপন্ন কর্মকান্ড যে চড়াও হয়ে উঠে বা উঠতে পারে তা সর্বদাই প্রমাণিত। আর বর্তমান প্রেক্ষাপটও আমাদের সেই ভয়ঙ্কর বার্তা দিচ্ছে।

ইতোপূর্বে ২০১৫ সালে ইসলামের প্রবর্তক ও বিশ্বনবী (সা.) এর কার্টুন প্রকাশের ফলশ্রুতিতে ব্যঙ্গাত্মক সামযিকী ‘শার্লি এব্দো’র অফিসে ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর সম্প্রতি প্যারিসের উপকণ্ঠে এক স্কুলের ইতিহাস ও ভূগোলের শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি তার ক্লাসে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর ব্যঙ্গচিত্র শিক্ষার্থীদের দেখালে এক কট্টরপহ্নি মুসলিম যুবক তাকে শিরচ্ছেদ করে হত্যা করে।

এটি একেবারেই নিন্দনীয় একটি অপরাধ! কান্তির বার্তা নিয়ে আসা ইসলাম কখনোই এমন অপরাধকে সমর্থন করেনা। এ হত্যাকান্ডের দ্বারা মূলতঃ ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্যকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে উগ্রপন্থির ধর্ম বলে প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও এমন হত্যাকান্ড ঘটার জন্য ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় কিছু বিধিমালাকে দোষারোপ করা যুক্তিসঙ্গত।

ফ্রান্সে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিধান আছে। তবে সেটার প্রকাশ করার মানে এই নয় যে, কোন ধর্মের প্রবর্তককে কটাক্ষ করা, উক্ত প্রবর্তকের ব্যঙ্গাত্মক ছবি প্রকাশ করার মুক্ত স্বাধীনতা দেখানো। এমন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একেবারেই গর্হিত অন্যায়।

সেজন্য যে বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রবাদিতা বা পরমত অসহিষ্ণুতা চড়াও হয়ে উঠে বা উঠতে পারে-এটি অতি স্বাভাবিক। যেকোন নিরপেক্ষ বিচারে ফ্রান্সের ওই স্কুল শিক্ষকের নির্মম হত্যাকান্ড সেটারই মৌলিক কারণ।

সুতরাং, ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ও সরকার প্রধানের এ ঘটনাগুলো হতে শিক্ষা নিয়ে সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। আর পরবর্তীতে এমন লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সেদেশের নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেখাতে গিয়ে তাদের যেকোন আপত্তিকর ধর্মীয় বিষয়ক মতামত বা কর্মকান্ডের বহিঃপ্রকাশ করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার আইন বাস্তবায়ন করা জরুরি মনে করি। এতে করে আর যাইহোক, কোন মানুষ পবিত্র ধর্ম বা তার প্রবর্তককে কটাক্ষ করার অপরাধে নির্মমভাবে মরতে হবেনা...।

অন্যদিকে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরও প্রতিবাদ বা প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে যৌক্তিক এবং শালিনতার মধ্য থেকে। এমন কিছু করা যাবে না, যে কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম বিভ্রান্ত হতে পারে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

লেখক : শিক্ষার্থী, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, বোয়াফ।