মো. আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি, প্রবল ইচ্ছে শক্তি থাকার পরও নেই নিজের জমি। শীতকে সামনে রেখে ভাড়া করে অন্যের জমি নিয়েছেন। তার মাঝে দু’টি প্লটকে আলাদা করে দু’ জায়গায় লাগিয়েছিলেন টমেটো। উদ্দেশ্য ছিল শীতের শুরুতে আগাম ফসল তুলে বেশি লাভে বাজার ধরতে পারার।

কৃষিতে তার বিনিয়োগকৃত অর্থ লভ্যাংশসহ তুলে আনতে দিনের পর দিন গভীর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন বেগুন গাছগুলোকে। যদি এই ফসল দ্বারা সাময়িক ভাগ্যবদল হয়। বলছিলাম শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়া গ্রামের এক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সাইফুল ইসলাম এর কথা।

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই কৃষক বেগুন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে। লম্বা করে বাশ বেঁধে গাছগুলোকে শক্ত করে দেয়া হয়েছে। ক্যামেরায় তার উৎপাদিত পণ্যের ছবি ধারণ চাইলে তিনি আপত্তি তুলেন। পরে কথা বলে জানা যায়, এই আপত্তির কারণ নিজের মনের গহীনে জমে থাকা ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ।

সাইফুল ক্ষোভের সাথে বলেন, আমার জমির মোট ২৪ শতক (শতাংশ) জায়গার ১৬ শতকে ১ হাজার চারা রোপণ করি। প্রতি পিস চারা দাম পড়ে খরচ বাবদ ১৫ টাকা করে। লাগানোর কিছু দিন পরেই গাছগুলোতে প্রচুর ফুল এসেছিল। কিন্তু বৃষ্টি সব শেষ করে দিলো। এতে আমার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। যদি সবগুলো টমেটো ধরতো তবে বাজারে পাইকারী মূল্য ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি প্রতি পেতাম।

বেগুন চাষ সম্পর্কে এ কৃষক বলেন, টমেটোর কিছুদিন পরেই বারোমাসি বেগুন রোপণ করি, দুই বছর পর্যন্ত এই গাছের কার্যকারিতা থাকবে। এই গাছগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। কিছু দিন আগে বেগুন ধরতে শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে প্রায় ১শত ২২ কেজি বেগুন পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছি,দামও পেয়েছি ভালো। খচরাদির বিষয়ে তিনি বলেন, টমেটোতে খরব বেশি। আমার পরিশ্রম বাদে শ্রমিকমুজুরি ও ঔষধ-সার বাবদ এখন পর্যন্ত প্রায় আশি হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আজ পর্যন্ত স্থানীয় কৃষি বিভাগ আমার কোনো খোঁজখবর নেইনি। কোনো প্রকাশ সার-বীজ কিংবা সরকারি কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা কিছুই পাইনি। তিনি বলেন, এবছর অতিবৃষ্টির কারনে অনেক বেগুণের চারা পঁচে যাওয়ায় বেশ ক্ষতির সম্ভাবনা। আপনারা (সাংবাদিক) ও শ্রীমঙ্গলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমার পাশে দাঁড়ালে এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবো।

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। আমি এই শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। আমি শীঘ্রই এই কৃষকের উৎপন্নকৃত টমেটো এবং বেগুন পরিদর্শনে যাবো। তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটির মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

(একে/এসপি/নভেম্বর ১১, ২০২০)