স্টাফ রিপোর্টার : রায়হানের বয়স এখন আট বছর। জন্মের পর থেকে বাবা মো. শাবউদ্দিনের সঙ্গে তার একবারও দেখা হয়নি। কথাও হয়নি কখনো। জলদস্যু বাহিনীর সদস্য হওয়ায় জন্মের পর থেকে একদিনও তার সঙ্গে দেখা করতে আসেননি শাবউদ্দিন। তবে আজ দেখার সুযোগ মিলেছে। তাই চট্টগ্রামের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মা মোছা. জানু আরার সঙ্গে এসেছে রায়হান।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে র‍্যাবের তত্ত্বাবধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন মো. শাবউদ্দিন। একইসঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে অস্ত্র ও গুলিসহ ৩৪ জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছেন।

রায়হান সাংবাদিকদের জানান, ‘ছোট বেলায় বাবাকে দেখিনি। বাবা দেখতে কেমন তাও জানতাম না। শুধু মায়ের কাছে বাবার অনেক গল্প শুনেছি। আমি জানি আমার বাবা কোনো খারাপ কাজ করেনি। এলাকার কিছু দুষ্টু মানুষ বাবাকে ফাঁসিয়ে বাড়িছাড়া করে দেয়।’

শাবউদ্দিনের স্ত্রী জানু আরা জানান, ‘স্থানীয় একটি মারামারির ঘটনার পর তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়। মামলার পর তার স্বামী ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে জলদস্যু বাহিনীতে যোগ দেয়। এরপর দীর্ঘ আট বছর সে বাড়ি আসেনি। তার সঙ্গে কোনো প্রকারের যোগাযোগও ছিল না। সে বেঁচে আছে কি-না তাও চার বছর আগে জানতেন না।’

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সুন্দরবনের মতো চট্রগ্রামের বাঁশখালী, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এলাকাও জলদস্যু মুক্ত হতে যাচ্ছে। আত্নসমর্পণ করা এই ৩৪ জলদস্যুদের হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যাহার করা হবে।

র‍্যাব জানিয়েছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার ৩৪ জন জলদস্যু অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে। আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া এসব সদস্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণলয়ে তালিকাভুক্ত ছয় থেকে সাতজন আছেন। যারা বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি, অস্ত্র কারবারি, ছিনতাই ও জলদস্যুতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছুদিন ধরেই মাঠপর্যায়ে কাজ করে র‌্যাব। এসব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়াও তাদের অন্যান্য মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও র‌্যাব-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ৯০টি অস্ত্র এবং ২০৫৬ রাউন্ড গুলি বুঝিয়ে দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করে। এর আগে ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ৪৩ জন জলদস্যু র‌্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছিল।

গত ২০১৬ সালের ৩১ শে মে থেকে ১ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করেছেন। এখন তারা মাছের ঘের, কাঁকড়া চাষসহ নানা পেশায় নিয়োজিত আছেন। আবার কেউ অন্য কাজ করছেন। আত্মসমর্পণ পরবর্তী পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা ও আইনি সহায়তা দেয়া হয়।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০২০)