রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : ‘বানের পানিতে ভেসে গ্যাছে মোর ঘরদুয়ার। তিস্তায় গিলে খাইছে মোর বসতভিটা। মুই এ্যালা কোনঠে থাকং ছাওয়া পোয়াক নিয়া। সরকার মানষক জমি ঘর দ্যায়, আর হামাক চোখে দ্যাখে না বাহে।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে তিস্তার করাল গ্রাসে বাস্তুভিটা হারিয়ে রশিদা বেগম নামের এক বৃদ্ধার ছিল এই আহাজারী। মাত্র ২সের জমির উপর মাথা গুজার ঠাঁই টুকুও কেড়ে নিয়েছে রাক্ষসী তিস্তা। সব হারিয়ে ওই বৃদ্ধা এখন দিনরাত প্রলাপ করছে।

রবিাবার ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ বুড়িরহাট গ্রামে মৃত কাশেম আলীর স্ত্রী রশিদা বেগমের(৬২)বাড়ী ছিল। তাঁর বাড়ী থেকে ৩কিলোমিটার দুরে পশ্চিম দিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত ছিল। কিন্তু নদীর বিনাসী খেলায় ধীরে ধীরে নদী বুড়িরহাট এলাকায় এসে পৌচ্ছে। ওই এলাকা রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) একটি টি বাঁধ নির্মাণ করেন। এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন সুখেই দিন কাটাছিল। কিন্তু তিস্তার করাল গ্রাসে গত জুলাইয়ে কয়েক দফা বন্যায় আকস্মিকভাবে টিবাঁধটি ভেঙ্গে যায়। সেই সাথে ভেঙ্গে যায় রশিদা বেগম(৫৫)এর ভিটেমাটি টুকুও। নিঃস্ব হয়ে যায় রশিদা। বাধ্য হয়েই নদীর পাশেই তার ভাতিজার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। রশিদা ২মেয়ে ও ২ছেলের জননী। কিন্তু দূর্ভাগ্য রশিদার।

বড় ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে রয়েছে। ছোট ছেলে বিয়ে করে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছে। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসীর সহযোগীতায়। আরেক মেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে আর করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে সেও তার মাকে সহযোগীতা করেছে। বৃদ্ধ বয়সেই দিনমজুরের কাজ করে ৩জনের খাবার সংগ্রহ করে রশিদা। নদী ভাঙ্গারপর থেকে সে কোন দিন সরকারী-বেসরকারীভাবে কোন সহযোগীতা পাননি। তবে সম্প্রতি বন্যাকালিন সময়ে কে কারা ৯কেজি চালের সঙ্গে ১কেজি চিড়া দিয়ে এসেছে। এছাড়া স্থানীয় মেম্বাররের কাছে ধন্যা দিয়েও মেলেনি বিধবা ভাতা। রশিদা বলেন, প্রতিদিন অসুখ হওয়া ছাওয়াডার জন্য ওষুধ কিনতে ১শত টাকা লাগে। কোনদিন তাদের রাস্তার ধারের কচু এবং কচুর পাতা খেয়েও দিন চলে যায়।

রবিবার ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকার বলেন, বন্যার সময় ত্রান বাড়ি বাড়ি দেয়া হয়েছে। না পাওয়ার সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নুরে তাসনিম বলেন, তালিকা পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(পিএস/এসপি/নভেম্বর ১৫, ২০২০)