শেরপুর প্রতিনিধি : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নিন্মাঞ্চলে নেমে যাওয়ায় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপন করা আমন আবাদ ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা শংকিত হয়ে পড়েছেন।

এদিকে, উজানের পানি নামতে থাকায় ভোগাই ও চেল্লাখালি নদী তীরবর্তী এলাকায় পাহাড়ী ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও রাস্তাঘাটের বিধ্বস্ত চিত্র ফুটে ওঠেছে। আকাশে মেঘ করলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে পাহাড়ি ঢলের শংকা জেগে ওঠে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসি পাহাড়ি ঢলের হাত থেকে ফসল রক্ষা ও জনদুর্ভোগ লাঘবে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর বাঁধ দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ।
এলাকাবাসী ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত কয়েকদিনের টানাবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নালিতাবাড়ীতে ভোগাই নদীর তীর রক্ষা বাঁধের তিনটি ভাঙন অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। উজানের ঢলের পানি নামতে থাকায় ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার নালিতাবাড়ীর চারটি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলের ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়। গ্রামগুলো হলো মরিচপুরান ইউনিয়নের গোজাকুড়া, বাঁশকান্দা, কয়ারপাড়, উল্লারপাড়, মনকান্দা, খলাভাঙ্গা, দক্ষিণ কোন্নগর, ভোগাইরপাড় ও মৌলবিপাড়া। নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের, খালভাঙ্গা, খড়করিয়াকান্দা ও নলকুড়া। যোগানিয়া ইউনিয়নের কাপাসিয়া, গেড়ামারা, তালুকপাড়া, ভাটিগাঙ্গপাড়, কলসপাড়, তারাকান্দি, পিপুলেশ্বর, নাকশী, গোনাপাড়া, গোল্লারপার ও গাগলাজানি। বাঘবেড় ইউনিয়নের সন্নাসীভিটা ও নয়াপাড়া গ্রাম। এসব এলাকার কৃষকরা আমন আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নালিতাবাড়ী পৌরসভার খালভাঙ্গা এলাকার ভোগাই নদীর তিনটি অংশে ৩০০ মিটার বাঁধ কাম সড়ক ভেঙে যায়। এছাড়া, গত ১৫ আগষ্ট শুক্রবার ঢলের পানিতে চেল্লাখালি নদীর সন্নাসীভিটা এলাকায় নদীর বাঁধের ৫০ মিটার ভেঙে যায়। ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি উজানে কমতে থাকায় দ্রুত বাঁধ সংস্কারের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে গেলে এলাকার কৃষকরা জানায়, উজানের পানি ভাটিতে নামতে থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খরখরিয়াকান্দা গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, ‘নতুন কইরা ভাটি অঞ্চলের গ্রামে পানি ঢুকতাছে। এলাকায় ধান ক্ষেতগুলা ৪ দিন ধইরা পানিতে ডুইব্বা রইছে। বাঁধ সংস্কার না অইলে এইবার ফসল ঘরে তোলুন যাইতো না।’ খালভাঙ্গা এলাকার গৃহিনী নুরুন নাহার বলেন,‘দুইবার ঢলের পানিতে খালভাঙ্গার সড়ক ও নদীর বান (বাঁধ) ভাইঙ্গা গেছে। অহন নদীর পানি কমতাছে। অহন বান্দের কাম না করলে হিবার (আরেকবার) ঢল আইলে আমগর বাড়িঘর ভাসাইয়া লইয়া যাইবো। সরকার আমগর দিকে একটু নজর দিলে আমরা বাইচ্চা জাইতাম। দক্ষিণ সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল জানান, চেল্লাখালি নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ভাঙনে এমনিতেই জমিতে বালু পড়েছে। পানি ভাটিতে নেমে যাওয়ায় নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। এখনি নদীর বাঁধ সংস্কার করা না গেলে কৃষকরা মহাবিপদে পরবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল জানান, উজানের পানি ভাটি এলাকায় নেমে যাওয়ায় নতুন করে ২৫ গ্রামের ৫০০ একর আমন খেত ডুবে গেছে। দ্রুত পানি সড়ে গেলে আমন আবাদে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে এর স্থায়িত বেশি হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোগাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমে গেলে সড়ক ও বাঁধের সংস্কার করা হবে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, চেল্লাখালী নদীর পানি কমে গেলে, বাঁধের ভাঙন অংশ দ্রুত সংস্কার করা হবে।
(এইচবি/এএস/আগস্ট ১৯, ২০১৪)