বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের জয়গাছি গ্রামে গত (১৫ নভেম্বর) সকালে মহাদেব শীলের বাড়ীতে নিজস্ব মন্দিরে কালী প্রতিমা চলে এসেছে এমন গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এমন খবরে মহাদেবের বাড়ীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ,বৃদ্ধা ও শিশুসহ সকল বয়েসের মানুষের ভীড় বাড়তে থাকে। 

সময়ে বাড়ীর লোকজন বাঁসের বেড়া দিয়ে প্রতিমা রাখার স্থানটি ঘিরে ফেলে, লিখে দেয়া হয় (বাঁসে কেউ হাত দিবেন না)। পাশেই রাখা একটি ঝুড়ি প্রতিমা দর্শনের পর মনবাসনা পুরনের প্রনামী হিসাবে লোকজন টাকা ফেলতে থাকে। এ যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ’র লালসালু উপন্যাস। শুধু পার্থক্য লালসালু বদলে এখানে ব্যবহার হয়েছে বাঁসের বেড়া। বুধবার বিকালে জয়গাছি গ্রামে মহাদেব শীলের বাড়ীতে পুলিশ গিয়ে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ধর্মভিরু লোকজনকে আকৃষ্ট করার অপতৎপরতা বন্ধ করে দেয়।

বুধবার দুপুরে জয়গাছি গ্রামের গিয়ে দেখা যায় মহাদেব শীলের বাড়ীতে জনতার ভীড়। তার নিজস্ব মন্দিরে মাটির তৈরী একটি নতুন কালী প্রতিমা রাখা হয়েছে। বাঁসের বেড়া দিয়ে প্রতিমা রাখার স্থানটি ঘিরে ফেলে, লিখে দেয়া হয় (বাঁসে কেউ হাত দিবেন না)। পাশেই রাখা একটি ঝুড়ি প্রতিমা দর্শনের পর মনবাসনা পুরনের প্রনামী হিসাবে লোকজন টাকা ফেলছে।

কথা হয় একই গ্রামের শ্যামল শীল, তন্ময় সাহাসহ বেশ কয়েকজন জানান, রাতের আধারে প্রতিমা বসিয়ে, গুজব ছড়িয়ে বড় কালী ভক্ত সাজার চেষ্টা করছে মায়া রানী শীল। এগুলো প্রতারনা ছাড়া আর কিছুই না। প্রনামীর নামে আবার টাকাও তোলা হচ্ছে। রাতারাতি এখানে কি ভাবে কালী প্রতিমা জেগে উঠলো এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কি ভাবে এখানে প্রতিমা জেগে উঠলো আমাদের জানা নেই। আমরা গিয়ে মাটি খুড়ে প্রমিতা বেড় হয়ে উঠেছে, এমন কোন আলামতও দেখতে পেলাম না। ঘটনাটি আমার কাছে বিশ্বাস যোগ্য মনে হয় না। মূলত সহজ সরল মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মহাদেব কুমার শীলে ছোট বোন কল্পনা রানী শীল (২৭) এর সাথে। তিনি বলেন, সর্ব প্রথম প্রতিমা উঠার বিষয়টি আমি দেখতে পাই। কি ভাবে দেখেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রবিবার সকালে উঠে আমাদের পূজা-অর্চনা করার ঘরে তাকিয়ে দেখি, ঘরের ভিতর ‘মা কালী’ অবস্থান করছে। এসময় আমি বিষয়টি বাড়ীর অন্যদের জানালে, তারা এসে ঘরের দরজা খুলে দেখে ‘পিতলের একটি কলস, একটি কুলা, একটি মগসহ পূজা করার বিভিন্ন সড়ঞ্জামসহ মা কালী ঘরে অবস্থান করছে’। অন্য কেউ এখানে রাতের আধাঁরে প্রতিমা রেখেছেন কি না এমন প্রশ্নে কোন উত্তর দিতে পারেননি তিনি।

মহাদেব শীলের স্ত্রী মায়া রানী শীল (৪৫) জানান, আমি ‘মা কালী’র’ ভক্ত। মা আমাকে স্বপ্নে দেখিয়েছেন তিনি আসচ্ছেন। তিনি আমার বাড়ীতে এসেছেন। স্বপ্নে আমাকে ‘ঘটপূজা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে’ এটা সম্পন্ন করলেই ‘মা কালী’ তার অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবেন। অন্য কেউ এখানে প্রতিমা রেখেছেন কি না এমন প্রশ্ন করা হলে, হট্যাৎ চোখ বন্ধ করে ‘জয় মা কালী’ বলে চিৎকার শুরু করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে থাকলেন। এগিয়ে এসে তার ছেলেরা লোকজনদের সরিয়ে দিতে লাগলেন।

কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে তার ছেলেরা জানান, মায়ের উপর ‘মা কালী’ ভর করেছে। তবে, তার দুই ছেলে সঞ্জয় কুমার শীল (২৫) ও গোপাল কুমার শীল জানান, কেউ পরিকল্পিত ভাবে এখানে প্রতিমা রেখেছেন কি না আমাদের জানা নেই। ঘটনা জানাজানির পর অনেকে দেখতে আসচ্ছে। কেউ আবার মনবাসনা পূরনের আশায় ‘মা কালী’কে দেখে প্রনামী হিসাবে অনেকেই টাকা পয়সা।

বাগেরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে,এম আজিজুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ধর্মভিরু লোকজনকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছিল। যেটি বন্ধ আমরা করে দিয়েছি।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ১৮, ২০২০)