রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ধর্ষিতার ভাইকে অপহরণের পর শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশান পুশ করে হাত,পা ও মুখ বেঁধে নির্যাতনের পর বস্তায় ভরে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার ধর্ষিতার ভাই বাদি হয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় এ  এজাহার দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের খোকন মণ্ডলের ছেলে সুকুমার মণ্ডল (৩৮), একই উপজেলার দেবীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল(৩৯) ও ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিক (৪০)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিক একই গ্রামের এক নারীকে বিয়ের নাটক করে অন্তঃস্বতা হওয়ার পর স্ত্রী হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যেতে বলায় তাকে ২০১৮ সালের ১১ জুন সাতক্ষীরা কোর্টে এফিডেফিডের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুলনার গল্লামারি ভুতের বাড়ি এলাকায় নিয়ে যায় আবু বক্কর ছিদ্দিক, গোলাম মোস্তফা ও সুকুমার মণ্ডল। গর্ভপাত ঘটাতে রাজী না হওয়ায় তাকে একটি ঘরে আটক রেখে ওই তিনজন গণধর্ষণ করে। পরদিন তার গর্ভপাত ঘটানোর কয়েকদিন পর আবু বক্কর ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ধর্ষিতা ওই নারী ওই তিনজনের নাম উল্লেখ করে ওই বছরের ২৬ জুলাই সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে। মামলাটি এক বছর যাবৎ (নাঃ শিশু-৪৯/১৮) রায়ের অপেক্ষায় আছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।

মামলার বিবরণে আরো যানা যায়, ধর্ষিতার ছোট ভাই মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ কিনে বাড়ির মোড়ে নামার পরপরাই অজ্ঞাতনামা তিনজনসহ তার মামলার আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিক, সুকুমার মণ্ডল ও গোলাম রসুল তার গলায় দা ধরে পার্শ্ববর্তী আজিবরের মেশিন ঘরের পিছনের বাগানে নিয়ে যায়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের পর সেখানে গলায় দা ধরে তার বাম হাতে দু’টি ইনজেকশান পুশ করা হয়। এরপর একটি ইঞ্জিনচালিত গাড়িতে করে তাকে সোয়ালিয়াা ব্রীজের পাশে নিয়ে যেয়ে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করা হয়। পরে তাকে একটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে ব্রীজের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার সময় একটি পিকআপের আলো দেখতে পেয়ে অপহরণকারিরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনরা মঙ্গলবার দিবাগত রাত দু'টোর দিকে সোয়ালিয়া ব্রীজের পাশ থেকে দু’ হাত, দু’ পা ও মুখ বাঁধা বস্তায় ভরা মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

অভিযোগ, ধর্ষণের মামলা তুলে না নেওয়ায় ওই যুবককে পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হুদা জানান, রাতেই মামলা রেকর্ড করা হবে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০২০)