মো.আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : প্রাণঘাতী করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শঙ্কিত দেশের মানুষ,তবুও থেমে নেই দৈনন্দিন জীবন যাত্রা। নানান শঙ্কা মাথায় নিয়ে এরই মধ্যে প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে শীতের পূর্ণ আমেজ। শীতকালে দেশের পর্যটন এলাকা গুলো মুখরিত হয়ে উঠে পর্যটকদের আগমনে। বিশেষ করে সিলেট বিভাগের চা বাগান ও হাওর কেন্দ্রিক এলাকা গুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পর্যটন স্পটগুলো হয়ে উঠে শীতকালীন বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। 

শীতে করোনার প্রকোপ বাড়ার সঙ্কা থাকলেও খোলা রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার পর্যটন কেন্দ্র গুলো। হাওরাঞ্চলে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ দেশী-বিদেশী নানান প্রজাতির অথিতি পাখির কলকাকলি। আর এই অথিতি পাখি মূলত শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল হাওরের বাইক্কাবিলেই সবচেয়ে বেশি আগমন ঘটে। এর বাহিরে হাওরের জলদ্বারা আর ছোট বড় অসংখ্য বিল এবং লেকেও আসে অনেক অথিতি পাখি। এমনই একটি মৎস খামার শাহ্ কাদেরিয়া ফিশারী লিমিটেড। ফিশারীর প্রতিটি বিল এর পার ঘেষে নানান প্রজাতির হাজার হাজার ফলজ গাছ আর জলদ্বারা মিলে সৃষ্টি হয়েছে প্রকৃতির অন্যরকম বৈচিত্র। কাদেরিয়া মৎস খামারে শীত মৌসুম এলেই বাদামি রঙের দেশি পাতি সরালি হাঁস,জলচর পাখি কালো বক,সাদাবক,পরিযায়ী পাখি শামুককূলসহ বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি বিকেল হলেই দলবেঁধে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের বানিকা গ্রামে ১৯৯৯ সালের দিকে ব্যক্তি উদ্যেগে লন্ডন প্রবাসী, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও দানবীর সৈয়দ মুকিত আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন ৩শত একর ভুমির উপর শাহ্ কাদেরিয়া মৎস খামার নামের মৎস ও কৃষি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। এটি মৎস খামার হলেও বর্তমানে এই খামারকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা।

খামারে প্রবেশ পথের বাম পাশে রয়েছে বিশাল শাহী ঈদগাহ,কারুকাজ সমৃদ্ধ মসজিদ আর মধ্যখানে রয়েছে আলিশান প্রধান ফটক। খামারের অভ্যান্তরে গড়ে উঠা দৃষ্টি নন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ির চার পাশের আঙিনা ঘীরে তৈরি হয়েছে মিনি পার্ক। বিনোদন আর দর্শনার্থীদের বসার জন্য এক নির্জন পরিবেশে সময় কাটিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত স্থান। চারিদিকে পাখির কলকাকলী মুখর সবুজ এই উদ্যান ঘিরে সাধারণ মানুষ আর দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর থাকে সারাবছর। বিশেষ করে শীতকালে খামার ঘিরে তৈরি হওয়া প্রকৃতি যেন সাজে নতুন এক রূপে। এক দিকে প্রকৃতির নয়নাভিরাম বৈচিত্রময় রূপ আর অন্যদিকে দলবেঁধে সকাল-বিকাল ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসে দেশী-বিদেশী অথিতি পাখির দল।

শীতকালে খামারের সবুজ গাছগাছালি ছোট বড় পুকুরের জলরাশিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সবুজ এই উদ্যানে অতিথি পাখির আনাগুনা অনেকাংশে বেড়ে যায়, প্রকৃতিতে তৈরি হয় পাখপাখালির অপরূপ গুঞ্জণ। এদিকে শাহ্ কাদেরীয়া মৎস খামারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে খামার কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতে নানা প্রদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলে জানা যায়।

প্রতিদিনই খামারসহ সেখানকার বৈচিত্রময় প্রকৃতি উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়,সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবি, পেশাজীবিসহ নানা পেশার মানুষজন পিকনিক এবং শিক্ষা সফরের উপযোক্ত স্থান হিসেবে অবসরে ঘুরে বেড়াতে ছুটে আসেন এখানে। বিশেষ করে শীতকালে এখানে পর্যটন আগমন ঘটে বেশি। দেশী পর্যটকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র,চিন,অষ্ট্রেলিয়াসহ মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পর্যটকও আসেন মাঝে মধ্যে।

শাহ্ কাদেরীয়া ফিশারীর স্বত্তাধিকারী সৈয়দ মুকিত আহমেদ জানান, এটি একটি মৎস খামার হলেও বর্তমানে পর্যটকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে রূপ লাভ করছে, এ কারণে পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের জন্য আগে থেকেই সুইমিংপুলসহ বেশ কিছু স্পটের উন্নয়ন হয়েছে, পর্যটকদের থাকার জন্য রিসোর্ট নির্মাণের কথাও জানান তিনি । তিনি বলেন, দেশের একটি পর্যটন বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের সাথে বর্তমানে কথাবার্তা চলছে। আশা করছি পর্যটন উন্নয়নে যৌথ প্রচেষ্টার ফলে এই এলাকাটি হয়ে উঠবে পর্যটন সম্ভাবনার নতুন পথ।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সৈয়দ মুকিত আহমেদ ১৯৯৯ সালের দিকে দেশে আসার পর থেকে নানা সপ্ন দেখা শুরু হয়। সিদ্ধান্ত নেন কৃষি ভিত্তিক মৎস খামার গড়ে তোলার। সিদ্ধান্তের শুরুটা ছিল মৎস খামার ঘিরেই। ছোট বেলা থেকে বিলেতের আলো বাতাসে বেড়ে উঠা সৈয়দ মুকিত বিলাসী জীবন ছেড়ে অবসরে সময়ে দেশের টানে সাধারণ মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষে প্রায় ৩শত একর ভুমির উপর গড়ে তুলেন দেশের সবচেয়ে বড় কৃষি ভিত্তিক মৎস খামার। শুরুকালে সেখানের রাস্তাঘাটসহ অবকাটামোগত নানা উন্নয়ন কাজে কয়েক হাজার শ্রমিক যুক্ত থাকলেও উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হওয়ায় বর্তমানে সেখানে প্রায় শতাধিক মানুষ কাজ করছেন।

(একে/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০২০)