মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : গায়ের রং কালো ও  উচ্চতায় খাটো। এ কার্যেণ বিয়ের পর থেকেই শিরিনকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো স্বামী ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী। এ কারণে বিয়ের বছর না ঘুরতেই শ্বশুড় বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় উঠতে হয়েছে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিরিন আক্তারকে। এ ঘরে অনাগত সন্তানের ভবিষতের চিন্তায় সকল নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতো শিরিন। কিন্তু সন্তানকে পৃথিবীর আলোয় আনার আগেই যৌতুকের জন্য স্বামীর নির্যাতনে প্রান হারাতে হয়েছে শিরিনকে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া নাচনাপাড়া এলাকায় এ ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু শিরিনকে হত্যার অভিযোগে স্বামী মিঠু সিকদারকে প্রধান আসামী করে ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে শিরিনের পিতা। এ ঘটনার পরই পলাতক রয়েছে স্বামী মিঠু ও তার পরিবারের লোকজন। তবে পুলিশ বলছে আসামীদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে। 

গত ১৯ নভেম্বর সকালে কলাপাড়া পৌর শহরের নাচনাপাড়া চৌরাস্তার একটি বাসা থেকে শিরিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘরে স্বামী ট্রলি চালক মিঠু সিকদারের সাথে থাকতো সে। কিন্তু শিরিনের মরদেহ ঘরে রেখে পালিয়ে যায় মিঠু। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিরিনের গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। পরিবারের দাবি শিরিনকে হত্যা করে লাশ ঢেকে রেখে স্বামী পালিয়ে গেছে।

এ ঘটনায় শিরিনের পিতা মোখলেছ হাওলাদার বাদি হয়ে জামাতা মিঠু সিকদার, শ্বশুড় বসির সিকদার, শ্বাশুড়ী কুলসুম বেগম, এরশাদ উল্লাহ মীর,মুক্তা বেগম,শিপন, নাসির সিকদার, শাহ আলম সিকদারসহ অজ্ঞাত সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা নং ( ২২। তাং ১৯/১১/২০২০)।

মামলা নিহত গৃহবধুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নের বাইনবুনিয়া গ্রামের মোখলেছ হাওলাদারের মেয়ে শিরিনের সাথে এক বছর আগে পাশ্ববর্তী আমতলী উপজেলার সেকান্দারখালী গ্রামের বসির সিকদারের ছেলে মিঠু সিকদারের বিয়ে হয় পারিবারিক সম্মতিতে। বিয়েতে স্বর্নালংকারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল দিয়ে তুলে দেয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, শিরিন কালো ও খাটো এ অভিযোগ তুলে তাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। এ কারনে শিরিনকে আমতলীর শ্বশুড় বাড়ি ছেড়ে কলাপাড়ায় ভাড়া বাসায় উঠতে হয়। কিন্তু এখানে এসেও চলে নির্যাতন।

শিরিনের ভাই নান্নু হাওলাদার,বোন জাকিয়া বেগম জানায়, একটি ট্রলি কেনার টাকার জন্য প্রায়ই শিরিনকে নির্যাতন করতো। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় যৌতুকের জন্য দাবি করা এক লাখ টাকা দিতে পারিনি। এ কারনেই পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিরিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এ হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রথমে শিরিন আত্মহত্যা করেছে এমন প্রচার চালালেও পরে স্বামী মিঠু পালিয়ে যায়।

ঘটনায় সময় ঘরে উপস্থিত নিহত শিরিনের বোনের ছেলে ছয় বছরের ইমাম হোসেন জানায়, তার খালার সাথে ঘটনার আগের রাতে ও ঘটনার রাতে ঘরের ভাড়া টাকা দেয়া নিয়ে তর্ক হয়। মারধর করা হয়। ঘটনার রাতে খালার স্বামী মিঠু তাকে রাত তিনটার দিকে ঘুম থেকে উঠিয়ে এক বাসায় নিয়ে রেখে যায়। ওই সময় খালাকে (শিরিন) ঘরে চাদর মুরি দিয়ে দেখেছেন। এমনকি তার খালুকে( মিঠু) একজনকে বলতে শুনছেন শিরিন মারা গেছে।

শিরিনের পিতা মোখলেছ হাওলাদার বলেন, তার গর্ভবতী মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। অনাগত সন্তান নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো শিরিনের। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখা আগেই এ পৃথিবী থেকে তাকে চলে যেতে হয়েছে পাষন্ডদের নির্যাতনে। সে এ ঘটনায় সে জামাই ও তার পরিবারের লোকদের শাস্তি দাবি করেন।

শুক্রবার শিরিনের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। এসময় জানাযায় উপস্থিত এলাকাবাসী দাবি করেন- একজনকে গর্ভবতী মায়ের সাথে তার গর্ভের সন্তানও মারা গেছে। এ হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন। কালো ও খাটো বলে কোন মেয়েকে যাতে এভাবে নির্মম মৃত্যুর শিকার হতে না হয় এজন্য এলাকাবাসীসহ পরিবারের লোকজন পাষন্ডদের সর্বোচ্চ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.আসাদুর রহমান বলেন, শিরিনের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার পরই শিরিনের স্বামী মিঠু পালিয়ে যাওয়ায় তাকেসহ মামলার আসামীদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে। দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান।

(এমকেআর/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০২০)