আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে এবছর শীতকালীন বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। পোকার আক্রমন না থাকায় এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শীতকালীন বেগুন চাষে ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলন এবং দাম ভালো থাকায় বিঘা প্রতি কৃষকদের লক্ষাধিক টাকা বিক্রির আশা করছেন। আর সপ্তাহে প্রতি বিঘা বেগুন ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে পারছেন প্রায় ৪০ মণ। সপ্তাহে ১ এক বিঘা জমি থেকে বেগুন বিক্রি করছেন ৩০ হাজার টাকারও বেশি। তবে পোকার আক্রমন না থাকায় কীটনাশক ব্যাবহার কমেছে, এতে চাষিদের অতিরিক্ত খরচ কমেগেছে, পাচ্ছেন নিরাপদ সবজি। 

রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার গোয়ালন্দ,কালখালী ও বালিয়াকান্দিতে সবচেয়ে বেশি বেগুনের আবাদ হয়ে থাকে।এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া,দেবগ্রাম ও উজানচর ফসলী মাঠে বেগুনের আবাদ বেশি হয়। দাম ভালো পাওয়ায় প্রতি বছরই এ অঞ্চলের কৃষকেরা আগাম শীতকালীন বেগুন চাষ করে থাকে। এবছরও বেগুনের ব্যাপক আবাদ করেছেন কৃষকেরা। তবে এবছর বেগুনে তেমন কোন পোকার আক্রমন লক্ষ করা যায়নি। তারপরও পোকার আক্রমন থেকে রক্ষায় ফেরোমন ফাঁদ পাতা হয়েছে বেগুন ক্ষেত গুলোতে।

আবহওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও হয়েছে অনেক বেশি। বর্তমানে বাজারে সব ধরনের সবজির চাহিদা থাকায় কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। বিঘা প্রতি বেগুন বীজ, সার, চাষ ও মজুরি সহ খরচ হয়েছে পনের হাজার টাকার মত। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন পাইকারি দরে ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন কৃষকেরা। আর মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮ শত টাকা থেকে ১ হাজার টাকায়। প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার বেগুন ক্ষেত থেকে বেগুন তুলতে পারে চাষিরা। বিঘা প্রতি একবার প্রায় ১৫ থেকে ১৮ মণ বেগুন তোলা যায়। সপ্তাহে তুলতে পারেন প্রায় ৪০ মণ থেকে ৫০ মণ। সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারছেন চাষিরা।

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বেগুন চাষি আক্কাস আলী মৃধা ও আব্দুল গফুর মিয়া বলেন, তারা কয়েক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তাদের সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় পনের হাজার টাকার মত বিঘা প্রতি। তবে ফলন ভালো হয়েছে। পোকার আক্রমনও অনেকটা কম এবার। চাহিদা থাকায় কিছুটা দাম কমলেও বর্তমানে পাইকারি দরে ২২ টাকা থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বেগুন বিক্রি করছেন। তবে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। তবে বর্তমান দামের থেকে তেমনটা না কমলে বিঘা প্রতি লক্ষাধিক টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলেন চাষিরা। অন্যান্য চাষিরাও বেগুন চাষ করে এবার ভালো ফলন ও লাভবান হচ্ছেন বলে জানান। বেগুন আবাদে কৃষকদের পরিবার ভালো চলছে বলে জানান।

গোপল কৃষ্ণ দাস-উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর রাজবাড়ী তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ সহ বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলাতে বেগুনের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। এবছর তিন হাজার একর বেগুন আবাদ অর্জিত হওয়ার আশা করছেন। ইতমধ্যে ২ হাজার একর বেগুনের অবাদ হয়েছে। আগাম আবাদ করায় বিক্রি শুরু করেছেন এবং ফলন ভালো হওয়ায় দামও ভালো পাচ্ছেন। বিঘা প্রতি কৃষকেরা এক লক্ষ টাকারও বেশি বেগুন বিক্রি করতে পারবে। পোকার আক্রমন কম থাকায় অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় নিরাপদ বেগুন উৎপাদন করতে পারছে কৃষকেরা। এবার বেগুন আবাদে ফলন বেশি ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা অনেক খুশি বলে জানান তিনি।

(একেএ/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০২০)