রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে কলারোয়ায় তার গাড়িবহরে হামলার মামলায় আরো পাঁচজন আদালতে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। রবিবার দুপুর ১২টা থেকে পৌনে দু'টো পর্যন্ত সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।  এ নিয়ে এ পর্যন্ত এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষী দিলেন।

সাক্ষীদাতার হলেন, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, ক্যামেরাম্যান শহীদুল ইসলাম জীবন, জোবায়দুল হক রাসেল, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ ও সৈনিক লীগ নেতা সরদার মুজিব। এ পর্যন্ত এ মামলায় ১৫ জন সাক্ষী দিলেন।সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এড. মিজানুর রহমান জানান, রোববার আসামীপক্ষকে হাইকোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল এর আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল ও সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। আসামীপক্ষ নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশ চাওয়া সংক্রান্ত রোববার শুনানী হওয়া ও সোমবার অধিকতর শুনানীর জন্য দিন আছে মর্মে কাগজপত্র দাখিল করে আদেশ এর সত্যায়িত কপি দাখিল করে আদালতে সময়ের আবেদন করলে বিচারক হুমায়ুন কবীর তা না’ মঞ্জুর করেন। পরে তিনি একে একে পাঁচজনের সাক্ষী গ্রহণ করলেও আসামীপক্ষ তাদের জেরা করেননি। স্বাক্ষী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদকেও জেরা করেননি তারা।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিবের নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস রাস্তার উপরে আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালিন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিকসহ কমপক্ষে এক ডজন দলীয় নেতা কর্মী আহত হয়।

এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক’ অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

নিম্ন আদালতে বাদির পক্ষে রায় না হওয়ায় ২০০৪ সালের ৪ আগষ্ট বাদি এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্রিমিনাল মিস কেস (৫৮৯৩/০৪) দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানী শেষে বিচারকদ্বয় ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নি¤œ আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসাথে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাদির উপস্থিতিতে নারাজির শুনানী করার জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দিলে পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। টির ১৫১/১৫ মামলাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই এ মামলায় বাদি সাক্ষী দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল। মামলায় বাদি মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার শেখ মোসলেমউদ্দিনসহ নয়জন সাক্ষী দেন ।

তবে বাদিকে জেরা করেনি আসামীপক্ষ। ২০১৭ সালের ৯ ও ২৩ আগষ্ট আসামীপক্ষ মামলা তিনটির কার্যক্রম হাইকোর্টে স্থগিত করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর উভয়পক্ষের শুনানীর পর আসামী পক্ষের মিসকেস খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ওই মামলাগুলি ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ি গত ০৪ নভেম্বর মামলার বাদি মোসলেমউদ্দিন আদালতে সাক্ষী দেওয়ার জন্য হাজিরা দেন।

ওইদিন আসামীপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টে ক্রিমিনাল মিস কেস খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে তারা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন উল্লেখ করে বলেন, চেম্বার জজ মামলাটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে ২২ নং ক্রমিকে রেখে আগামি বছরের ৪ জানুয়ারি শুনানীর জন্য দিন ধার্য করেছেন। এ সংক্রান্ত আইনজীবীর প্যাডে লেখা সনদ তারা আদালতে উপস্থাপন করেন। বিকেলে বিচারক হুমায়ুন কবীর এ সংক্রান্ত শুনানী শেষে আসামীপক্ষকে সুপ্রিম কোর্টের আদেশের মূল কপি উপস্থাপন ও বাদির সাক্ষীর জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। ওই দিন এবং রোববার তারা সুপ্রিম কোর্টে স্থগিতাদেশের কোন কপি মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে উপস্থাপন করতে পারেননি।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০২০)