রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে সহ চারজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক বিলাস মণ্ডলের কাছে এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখিত আসামী হলেন, রায়হানুর ওরফে রায়হানুর রহমান (৩৬)। তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলিষা গ্রামের ডাঃ শাহজাহান আলীর ছেলে।

সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তভার পাওয়ার পর এক মাস আট দিনে ২৮ জন স্বাক্ষীর সাক্ষ্য ও আদালতে ১৬৪ ধারায় রায়হানুল ইসলামের জবানবন্দী পর্যালোচনা সাপেক্ষে তাকে একমাত্র আসামী করে আদালতে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসাদুল, রাজ্জাক ও আব্দুল মালেককে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের বড় ছেলে শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেন। মেঝ ছেলে আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে সে খাওয়া দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কাজ না করায় চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুর রহমানকে। সংসারে টাকা দিতে না পারায় শাহীনুৃরের স্ত্রী দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতো।

এরই জের ধরে গত ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই মোঃ শাহীনুর রহমান(৪০) ভাবী সাবিনা খাতুন(৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যূালয়েরে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী(১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে(৮) কোমল পানীয় এর সাথে ঘুমের বাড়ি খাওয়ায়। পরদিন ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যাকারীরা ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়।

এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শ্বাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী ময়না খাতুন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে নেমে সিআইডি সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাইর রায়হানুর রহমান, একই গ্রামের রাজ্জাক দালাল, আব্দুল মালেক ও ধানঘরা গ্রামের আসাদুল সরদারকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুরকে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মণ্ডলের কাছে একাই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। নিহত পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু মারিয়া বর্তমানে হেলাতলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনের কাছে বড় হচ্ছে।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২৪, ২০২০)