রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ী জেলার পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর সাথে কলেজ শিক্ষকদের এসিআর প্রদান ও কলেজ তহবিলে রক্ষিত দুই কোটি চব্বিশ লাখ টাকা ফেরতের সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষকদের সমন্বয়ে পৃথক দু’টি কমিটি করে এসিআর প্রদান ও কলেজ তহবিলে রক্ষিত দুই কোটি চব্বিশ লাখ টাকা ফেরতের কার্যক্রমে অধ্যক্ষকে সহযোগিতা প্রদানের আহবান শিক্ষকরা প্রত্যাখ্যান করলে গত সোমবার কার্যত সমঝোতার পথটি বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় অধ্যক্ষের সাথে কয়েকজন শিক্ষক বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

বর্তমানে এ নিয়ে অধ্যক্ষের সাথে শিক্ষকদের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের এসিআর প্রদান ও কলেজ তহবিলে রক্ষিত দুই কোটি চব্বিশ লাখ টাকা ফেরতের দাবীতে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলনে নামার পাশাপাশি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

জানা যায়, গত সোমবার ও মঙ্গলবার শিক্ষকরা কলেজ মিলনায়তনে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঐক্যমত পোষণ করে বক্তব্য দেন শিক্ষকরা। সমঝোতার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাংশা সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম শরিফুল মোরশেদ রনজু কর্তৃক গত ২ নভেম্বর শিক্ষা সচিব বরাবর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা দরখাস্তের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন কলেজের শিক্ষকরা। পাংশা সরকারী কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম শরিফুল মোরশেদ রনজু বলেন- অধ্যক্ষের দুর্নীতি, আর্থিক অব্যবস্থাপনা, শিক্ষকদের সঙ্গে অ-সৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারি নিয়মমত কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এসিআর না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা তার কাছে কোনো এসিআর ফাইল জমা দেন নাই। ২৩ নভেম্বর সকালে শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক সকল শিক্ষকের সভা আহবান করা হয়। সভায় শিক্ষকদের দাবী ছিল- বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন-এসিআর সকলের সামনে নম্বর দিতে হবে। সেই সাথে পাংশা সরকারি কলেজ জাতীয়করণ (০৮/১০/২০১৫) এরপর গৃহীত বেতন ভাতাদি কলেজ তহবিলে রক্ষিত দুই কোটি চব্বিশ লাখ টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের ফেরত দেওয়ার দাবী করে।

অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী বলেন, এসিআর প্রতিবেদন স্ব-স্ব ব্যক্তির সন্মুখে নম্বর দেওয়ার সরকারী বিধান নেই। ২০১৮ সালে পাংশা সরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারী বেতন ভাতাদি বকেয়া হিসেবে ৮/১০/২০১৫ থেকে অর্থ বরাদ্দ হয়। যাহা কলেজ থেকে গৃহীত বেতন ভাতাদি ফেরত দিয়ে বকেয়া গ্রহন করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। একই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে এবং সরকারি বেতনভাতাদির অর্থ দুইবার বেতনভাতাদি উত্তোলন করার সুযোগ নাই।

অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী বলেন, ২৩ নভেম্বর দুপুরে পাংশার ইউএনও অফিসে অনলাইন ক্লাস সংক্রান্ত সভায় অংশগ্রহণ শেষে কলেজ অফিস কক্ষে ফিরলে দুই কোটি ২৪ লাখ টাকার চেক ও এসিআর দাবী করেন শিক্ষকরা। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে সরকারি অর্থের চেক দিতে অসম্মতি জানালে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তৈয়েবুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক তোফাজ্জেল হোসেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক তোজাম্মেল হোসেন, বাংলা বিভাগের প্রভাষক ও কলেজ শিক্ষক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ শিব শংকর চক্রবর্তী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক ড. মনিরুল ইসলাম, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুল খালেক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ও কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক একেএম শরিফুল মোরশেদ রনজু অফিসকক্ষে তার সাথে বাক-বিতন্ডা করে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক চৌধুরী পাংশা মডেল থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে ওসি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের একটি টিম কলেজ ক্যাম্পাসে পাঠান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হয়।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে কলেজের সকল বিভাগের শিক্ষকরা উদ্ভ‚ত পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষক মিলনায়তনে বৈঠকে মিলিত হন। অপরদিকে অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরী নিজ অফিস কক্ষে প্রশাসনিক কার্যক্রম দেখভাল করেন।

এছাড়া, কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকবৃন্দ জানান, নিয়োগ শর্ত মোতাবেক পিএফ’র কর্তিত ১০% টাকা তারা পেয়েছেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃক দেয় বাকি ১০% টাকা তারা অদ্যবধি পাননি। ইতোমধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ২৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ৬জন ইন্তেকাল করেছেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা গত ১১ নভেম্বর তাদের প্রাপ্য টাকা প্রাপ্তির জন্য অধ্যক্ষের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা. আতাউল হক খান চৌধুরীর সাথে শিক্ষকদের উদ্ভুত পরিস্থিতির সুরাহা না হলে যে কোনো মুহুর্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি কলেজের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে অধ্যক্ষের সাথে শিক্ষকদের টানাপড়েনের নেপথ্য নিয়েও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।

(একেএ/এসপি/নভেম্বর ২৭, ২০২০)