শিতাংশু গুহ


নিউইয়র্ক সিটিতে আজ ২৭ নভেম্বর ২০২০ মোট করোনা ভাইরাস রুগী ৩লক্ষ ৭হাজার, মৃত্যু ২৪২৪১। গতকাল মৃত ১১জনসহ। নিউইয়র্ক ষ্টেটে আজ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৬ লক্ষ ২৫ হাজার। মৃত ৩৩৯৫৯। গতকাল মারা গেছেন ৬৯জন। আমেরিকায় মোট আক্রান্ত ১ কোটি ৩০ লক্ষ, গতকালের ১ লক্ষ ৩হাজার সহ। মৃত ২লক্ষ ৬৪ হাজার, গতকাল মারা গেছেন ১১৭৮ জন। পুরো বিশ্বে মোট আক্রান্ত ৬ কোটি ১৫ লক্ষ। মারা গেছেন ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার। 

এ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বিশ্বে সবদিক থেকে শীর্ষে থাকা আমেরিকা করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যু’র দিক থেকেও শীর্ষে রয়েছে। করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও আমেরিকা শীর্ষে। বিশ্বের প্রথম ভ্যাকসিন প্রায় এসে গেছে। ১১ ডিসেম্বর ২০২০ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে মানব দেহে প্রথম ভ্যাকসিন ‘পুশ’ হবে? বিশ্বে হয়তো আমেরিকানরা সর্বাগ্রে ভ্যাকসিন পাবেন। তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়, আমেরিকায় এত মৃত্য’র কারণ কি? ইমিউন সিষ্টেম? খাদ্যাভ্যাস?

কারণ যাই হোক, করোনা’র সর্ব বৃহৎ ভিকটিম ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ৭৪’। নভেম্বরে নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের মূল কারণ ‘করোনা’। ট্রাম্পের করোনা হয়েছিলো, তিনি তিনদিনে সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু মার্কিন ভোটার তাঁকে হোয়াই হাউস থেকে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। করোনা’র সেকেন্ড বড় ভিকটিম হচ্ছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ৫৬। তাঁর কপাল ভালো, তিনি দশ নাম্বার ডাউনিং ষ্ট্রিটের বাসিন্দা, তাই হয়তো মরতে মরতে বেঁচে গেছেন।

করোনা ভাইরাস শুধু যে ধর্মনিরপেক্ষ, মানে ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে আক্রমণ করেছে তা নয়, বরং এর চরিত্র অনেকটা সমাজতান্ত্রিক, অর্থাৎ ধনি-দরিদ্র; ক্ষমতাশালী, ক্ষমতাহীন সবাইকে ধরাশায়ী করেছে। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী থেকে বস্তির মানুষ কেউ বাদ যায়নি। করোনা নারী-পুরুষ সবাইকে ধরেছে। তবে মরেছে বেশি গরিব মানুষ। উন্নত দেশে বয়স্ক মানুষ, বিশেষত: যাঁরা অন্য রোগে ভুগছিলেন, তাঁদের মধ্যে মৃত্য’র হার ছিলো বেশি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো ৬৫ জুলাইয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর কেইস ছিলো মাইল্ড। ব্রাজিল করোনায় ‘হার্ড-হিট’ দেশ। সেখানে মৃতের সংখ্যা ১লক্ষ ৪৪ হাজার। বলিভিয়া, গুয়েতেমালা ও হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট; আর্মেনিয়া ও রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এদের সবার মধ্যে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থা ছিলো সঙ্কটজনক। মার্চের শেষে তিনি আক্রান্ত হন, আইসিইউ-তে ছিলেন তিনদিন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও কাজে যোগ দেন এপ্রিলের শেষদিকে।

হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট জুয়ান অর্ল্যান্ডো হার্নান্ডেজ ৫১ আক্রান্ত হন জুন, সাথে তাঁর স্ত্রী ও দুই উপদেষ্টা। প্রথম দিকে তেমন লক্ষণ না থাকলেও শেষের দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তাঁকে অক্সিজেন দিতে হয়। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট মিস জেনিন এনেজ ৫৩ জুলাইতে আক্রান্ত হন, ১৪দিন কোয়ারিন্টিনে থাকেন। বলিভিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বেশ কিছু কর্মকর্তাও আক্রান্ত হ’ন। গুয়েতেমালার প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো জিয়ামেট্টি ৬৪ করোনা পজিটিভ, কিন্তু তাঁর কেইস ছিলো মাইল্ড।

মোনাকো’র প্রিন্স এলবার্ট-২ বয়স ৬২ সম্ভবত: প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি করোনায় আক্রান্ত হ’ন। তার অফিস ১৯ শে মার্চ ২০২০ এটি জানায়। তিনি ১৪দিন কোয়ারিন্টিনে ছিলেন। বৃটেনের প্রিন্স চার্লস, ৭১ করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে ছিলেন। রাজপ্রাসাদ ২৫শে মার্চ ২০২০ এ ঘোষণা দেয়। প্রিন্স চার্লস একদিন আগে তাঁর মা রানী এলিজাবেথ-২ এর সাথে দেখা করেছিলেন, তবে রানীর করোনা হয়নি।

নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বুহারির চিফ অফ ষ্টাফ আব্বা কোয়েরি মার্চে করোনা আক্রান্ত হয়ে লাগোসের একটি এপ্রিলে হাসপাতালে মারা যান। দেশটি’র বিদেশমন্ত্রী জিওফ্রে অনিয়েমা জুলাইয়ে আক্রান্ত হয়ে তিন সপ্তাহ কোয়ারিন্টিনে ছিলেন। কমপক্ষে আটজন গভর্নর গত ক’মাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়েন ৪৫, জুনে এক সপ্তাহ আইসোলেশন ছিলেন, কারণ তাঁর একজন ঘনিষ্ট ফ্যামিলি মেম্বার করোনা পিজিটিভ হ’ন।

রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিসুইসটিন ৫৪ এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। জাম্বিয়ার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইসটাউ টাউরে এবং অর্থমন্ত্রী ম্যামবাড়ি নিজি; এনার্জি মন্ত্রী ফাফা সান্যাং করোনা আক্রান্ত হলে প্রেসিডেন্ট এডামা বাঢ়ো আইসোলেশনে যান। জনগণকে তিনি টুইট করে জানান, ‘স্টে সেফ, কোভিড-১৯ ইজ রিয়েল’। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান ব্রেক্সিট নিগোশিয়েটর মিশেল বার্নিয়ার ৬৯ মধ্যে মার্চে করোনায় আক্রান্ত হ’ন।

কানাডা’র প্রধানমন্ত্রী জাষ্টিন ট্রুডো ৪৮ আইসোলেশন ছিলেন, আক্রান্ত হননি। তাঁর পত্নী আক্রান্ত হয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল আইসোলেশন ছিলেন। ভারতে জুনিয়ার রেলওয়ে মন্ত্রী সুরেশ অঙ্গাদি, ৬৫ করোনায় মারা যান। বহু উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভালো আছেন।

ইরানে ফেব্রুয়ারীতে করোনা হানা দেয়, এতে অন্তত: ১৭জন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, মোল্লা মারা যান। দেশটি’টি একজন ভাইস-প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট স্পীকার, প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি’র নারী বিষয়ক ডেপুটি মন্ত্রী মাসুমা এবতেকার এবং অন্যান্য উচ্চ-পদস্থ কর্মকতা আক্রান্ত হ’ন। করোনা ইরানকে ভালোই আঘাত করেছে। তবে ইরান সরকারিভাবে মৃতের যে সংখ্যা ঘোষণা করছে, প্রকৃত সংখ্যা এর তিন-চার গুন্ বলে উন্নত দেশগুলো ধারণা করছে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।