আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আটক হয়েছেন ১৪ রোহিঙ্গা। একটি ট্রেনে করে যাওয়ার সময় ১৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি বড় দলকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

গত সপ্তাহে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বিশেষ ট্রেনে করে দিল্লি যাওয়ার সময় মাঝপথে তাদের আটক করা হয়। ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভুয়া নাম-পরিচয়ে তারা টিকিট কেটেছিলেন এবং তাদের কারও কাছেই বৈধ পরিচয়পত্র ছিল না।

ত্রিপুরার আগরতলা থেকে দ্রুতগামী বিশেষ রাজধানী এক্সপ্রেসে করে যাত্রী হিসেবে ছিলেন যাচ্ছিলেন ওই রোহিঙ্গারা। ওই দলটিতে ১০ জনই ছিলেন নারী। বাকিদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং এক শিশু রয়েছে। ট্রেনটি যখন ত্রিপুরা ও আসাম ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে তখন কামরার অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তারা বচসায় জড়িয়ে পড়লে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ভিত্তিতেই সোমবার মধ্যরাতে শিলিগুড়ি শহরের কাছে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পুলিশ তাদের আটক করে। ভারতের পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের প্রধান মুখপাত্র শুভানন চন্দা বলেন, এরা সবাই অন্য নামে টিকিট কেটেছিলেন এবং তাদের কারও কাছেই পরিচয়পত্র ছিল না।

তিনি বলেন, টিকিট পরীক্ষক যখন চেকিং করছিলেন তারা কেউই আইডি দেখাতে পারেননি এবং তাকে কেন্দ্র করে বাগবিতন্ডা শুরু হয়। অন্য যাত্রীরা আলিপুরদুয়ারে রেলের হেল্প-লাইনে ফোন করলে রেল পুলিশ পরের স্টেশনে গিয়েই তাদের আটক করে এবং রোহিঙ্গাদের ওই দলটিকে গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ বা জিআরপির হাতে তুলে দেওয়া হয়।

তবে কীভাবে তারা ভারতে ঢুকলেন এবং রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো নিরাপত্তা সম্পন্ন ট্রেনে উঠলেন রেলের কাছে এর কোনও সদুত্তর নেই। চন্দা বলেন, ‘কীভাবে তারা এদেশে এসেছেন আমাদের জানা নেই। তবে ধরা পড়া মাত্রই আমরা জিআরপির হাতে তাদের তুলে দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের অধীন ওই সংস্থাই এখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।’

জেরার মুখে ওই রোহিঙ্গারা স্বীকার করেছে তারা মাত্র গত সপ্তাহেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছেন এবং ভারতে ঢোকার পরদিনই তারা আগরতলা রাজধানীতে চাপেন। টিকিটের ব্যবস্থা করা ছিল আগে থেকেই। তবে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অনিন্দ্য সরকার বলছেন, এই রুট দিয়ে রোহিঙ্গাদের ভারতের ঢোকার ঘটনা তাকে বেশ অবাক করেছে।

তার কথায়, ‘বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার সীমান্ত যে নিশ্ছিদ্র তা মোটেই বলা যাবে না, আর বৈধ ও অবৈধ পথে এ অঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে যাতায়াতও আছে। কিন্তু রোহিঙ্গারাও যে এই রুট ব্যবহার করছে তা আমি এই প্রথম শুনলাম। তারা যদি ভারতের মেইনল্যান্ডে যেতে চান তাহলে এখান দিয়ে যেতে হলে তাদের অনেক ঘুরপথে যেতে হবে। বরং, পশ্চিমবঙ্গের মালদা বা বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ঢোকা তাদের জন্য অনেক সুবিধাজনক।’

আগরতলায় অর্থনীতিবিদ ও গবেষক সালিম শাহ অবশ্য মনে করছেন, কক্সবাজারের শিবির থেকে পালিয়ে এসে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের ত্রিপুরায় ঢোকাটা তেমন কঠিন কোনও ব্যাপার নয়। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে কুমিল্লা সড়কপথে বড়জোর আড়াই ঘন্টার রাস্তা। আর কুমিল্লা শহর বা রেলস্টেশন থেকে সীমান্তে এদিকের সোনামুড়া চেকপোস্ট মাত্র দশ-পনেরো কিলোমিটার।’

এই গবেষক বলেন, শরণার্থী শিবির থেকে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে রোহিঙ্গারা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বলে খবর পাই, তাতে এটুকু রাস্তা পাড়ি দেওয়া কি খুব কঠিন? আর একবার সোনামুড়া সীমান্ত পেরোলেই দেড় ঘন্টার রোড জার্নিতে আগরতলা পৌঁছে যাওয়া যায়। তারপর আগরতলা স্টেশন থেকেই ট্রেনে চাপা সম্ভব। কিন্তু আমাকে যা বিস্মিত করেছে তা হল রাজধানীর মতো ট্রেনে কীভাবে তারা চাপতে পারলেন? তার মানে একটা দালাল চক্র এখানে কাজ করছে, অর্থের বিনিময়ে তাদের টিকিট বা জাল পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।’

ত্রিপুরা সীমান্তে দুজন বা তিনজন রোহিঙ্গার ধরা পড়ার ঘটনা প্রথম সংবাদমাধ্যমে আসে মাত্র কয়েক মাস আগেই। কিন্তু এখন যেভাবে ১৪ একটি দল ধরা পড়েছে তাতে স্পষ্ট যে এই রুটটি কক্সবাজারের শরণার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রোহিঙ্গারা নৌকা বা ছোট জাহাজে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন বহুদিন ধরেই। কিন্তু এখন তাদের এই নতুন রুটের হদিশ ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও উদ্বেগে ফেলেছে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২০)