টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধুসেতু-ঢাকা মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী একটি বাসকে পেছন থেকে সবজি বোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দেওয়ায় ৬ যাত্রী নিহত ও ১০জন আহত হয়েছেন। 

শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে মহাসড়কে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কুর্ণী এলাকার ইচাইল নামকস্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সায়েদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছেন, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জয়নাল হোসেনের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (৩৪), পারভেজ আলীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম(৩১) ও শানের হাট গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে ট্রাকের হেলপার চুন্নু মিয়া(৩২)। অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই স্থানে ঢাকাগামী সেবা ক্লাসিক পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসের বিকল চাকা চালকের সহকারীরা মেরামত করছিলেন। এ সময় যাত্রীদের অনেকে বাস থেকে নিচে নেমে দাঁড়িয়েছিলেন। এসময় হঠাৎ থেমে থাকা বাসটিকে পেছন থেকে সবজি বোঝাই একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ রাস্তার পাশের একটি ঘরের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায় এবং ট্রাকের সামনের অংশ বাসের পেছনে ধাক্কা লাগলে বাসের পেছন ও ট্রাকের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ফলে ঘটনাস্থলেই নারীসহ বাসের চার যাত্রী নিহত হন। আহত মানুষের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে মির্জাপুর থানা, গোড়াই হাইওয়ে থানা, ট্রাফিক পুলিশ ও মির্জাপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন।

মহাসড়কের পাশের বাড়ির ঘরে নাতি নয়ন মিয়াকে(১১) নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলেন বিধবা শান্তি বেগম। তিনি জানান, হঠাৎ ঘরে তিনি বিকট শব্দ শুনতে পান। মুহূর্তের মধ্যে তাদের খাটের ওপর ইট-বালু পড়তে থাকে। বিছানাটি ভাঙা দেওয়াল থেকে দূরে ছিল। এ জন্য তারা বেঁচে গেলেও ঘরে থাকা টেলিভিশন, আলমারিসহ মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে।

গোড়াই হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোজাফর হোসেন ও ট্রাফিক সাজেন্ট মো. রোবায়েত হোসেন জানান, রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী সেবা ক্লাসিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস মির্জাপুর উপজেলার কুর্ণী এলাকার ইচাইল নামকস্থানে বিকল হয়ে পড়ে। পরে মেরামতের জন্য বাসটিকে মহাসড়কের পাশে দাঁড় করানো হয়। শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে ঢাকাগামী সবজি ভর্তি একটি ট্রাক পেছন থেকে বাসটিকে ধাক্কা দেয়। ট্রাকের ধাক্কায় বাসটি পাশের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে আরও দুই জন মারা যান। এ ঘটনায় অন্তত ১০যাত্রী আহত হন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে পাঁচজনকে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তারা আরও জানান, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কের একলেনে একঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সহায়তায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

মির্জাপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. শওকত হোসেন জানান, নিহত লোকজনের পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তিন জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহত ট্রাকচালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাসচালকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা চলছে। নিহতদের মধ্যে চারজনের লাশ হাইওয়ে পুলিশের কাছে ও দুজনের লাশ কুমুদিনী হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ০৪, ২০২০)