শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়নের কারণে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদযোগ্য কৃষি জমি। কিন্তু আধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রযুক্তি ও যন্ত্রের ব্যবহার কৃষি ব্যবস্থার চিত্র পাল্টে গেছে। কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও আধুনিক যন্ত্রাংশের ছোঁয়ায় বেড়েছে উৎপাদন। কৃষকরা বীজতলা তৈরি,রোপণ থেকে থেকে শুরু করে উৎপাদন, কাটা, ঝাড়াই-মাড়াই, বস্তাবন্দি, পরিবহন প্রতিটি স্তরে ব্যবহার করছে যান্ত্রিক প্রযুক্তি।এতে সময়, শ্রম, অর্থ ও পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি জমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানিয়েজেন উদ্যোক্তরা।

অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে প্লাস্টিকের ট্রে’তে তৈরী হচ্ছে বোরো’র বীজতলা। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে, এসব ট্রে। ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে এসব বীজতলা বোপন করা হচ্ছে জমিতে।রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের সাহায্যে জমিতে রোরো ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষক। ফসলের বেড তৈরি এবং ভুট্রা ও গম রোপণেও ব্যবহার হচ্ছে, যান্ত্রিক পদ্ধতি। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার পুরিয়াগ্রামের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মো. মতিউর রহমান এখন যান্ত্রিক কৃষি পদ্ধতিকে ঝুকে পড়েছেন। তার এসব পদ্ধতি দেখে এখন অনেক কৃষক যান্ত্রিক পদ্ধতিকে ঝুকছেন।

কৃষক মতিউর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে আবাদি জমিতে কৃষকরা এখন চাষ দেন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে। বীজতলা তৈরি ও বীজ বোনাও চলছে যন্ত্রেই। সেচ পাম্প ব্যবহারে সেচ পদ্ধতিরও পরিবর্তন হয়েছে আরো আগেই। চাষ দেয়ার মতো ধান মাড়াই-ঝাড়াই ও বস্তাবন্দিতেও এখন ব্যবহার যন্ত্র। কৃষি’র সকল কাজেই যন্ত্রের ছোঁয়া। যন্ত্র যেমন শ্রমকে বাঁচিয়েছে, তেমনি সময়কেও। গ্রাামাঞ্চল থেকে বছর বা মাস কাবারি কামলা প্রথা উঠেই গেছে। এখন কম জমিতে চাষাবাদ করে অনেক বেশি ফসল পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহারে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে।

সদর উপজেলার ঝানঝিরা এলাকার কৃষক দবিরুল ইসলাম জানান, দিনে দিনে কৃষি কাজে বাড়ছে যন্ত্রের ব্যবহার। কৃষি কাজে যান্ত্রিক উপকরণ দিয়ে হালচাষ, ক্ষেত থেকে ধান-গম কাটা, উঠানো,মাড়াই-ঝাড়াই ও বস্তাবন্দির কাজও করছেন কৃষকেরা যন্ত্রের মাধ্যমে। যন্ত্রের ব্যবহারে অল্প সময়েই সব জমি চাষ ও চারা রোপণ করতে পারছে কৃষক।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির অন্যতম সংযোজনের একটি হচ্ছে, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল কাটা, ঝাড়াই-মাড়াই, বস্তাবন্দি, খোসা থেকে দানা আলাদা করা যায়। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনায় কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে।

ছোট আকৃতির ধানি জমি চাষেও রয়েছে এর ব্যবহার বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর মহা পরিচালক প্রকৌশলী ড.মো.এছরাইল হোসেন জানান, বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর জন্যও রয়েছে ব্রডকাস্ট সিডার। নির্দিষ্ট অবস্থানে বীজ বপনের জন্য আছে সিডর্ডিল। জমির শক্ত মাটি কর্ষণের জন্য সাব সয়লার, ধান কিংবা অন্যান্য ফসলি বীজ শুকানোর জন্যও ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রায়ার যন্ত্র। ধান, গম, ভুট্টা শুকাতেও ব্যাচ ড্রায়ার নামক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া শস্য কাটার জন্য রয়েছে পাওয়ার রিপার মেশিন। বীজ ঝেড়ে পরিষ্কারের জন্য আছে ইউনার যন্ত্র।উৎপাদিত ফসল উত্তোলন, কাটা, ঝাড়াই-মাড়াই,বস্তাবন্দি এবং পরিবহনসহ কৃষি’র প্রতিটি স্তওে এখন ব্যবহার করছে যান্ত্রিক প্রযুক্তি। এতে সময়, শ্রম.অর্থ ও পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি জমিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যান্ত্রিক পদ্ধতি কৃষি খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। শ্রম, অর্থ, সময় বাঁচাতে,সবকিছুকে আরো বেশি প্রযুক্তি নির্ভর মডেলে রূপান্তর হয়েছে কৃষি সেক্টর।

সরজমিনে দেখা গেছে, সনাতন পদ্ধতি ঝেড়ে পেলে এ অঞ্চলে যান্ত্রিক পদ্ধতিকে চাষাবাদ বাড়ছে। আর এসব যন্ত্র ক্ষেত-খামারে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে একদিকে যেমন শ্রম ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। তেমনি বাড়ছে, ফসলের উৎপাদন।সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এ অঞ্চলে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ আরো বেড়ে যাবে,এমনটাই মন্তব্য করছেন কৃষিবিদরা।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০২০)