সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ভ্রাম্যমান আদালতে দু’বছর সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সক্রিয় কর্মী এক মাদ্রাসা শিক্ষক ত্রুটিযুক্ত প্রসিকিউশন রিপোর্টের ফলে খালাস পাওয়ায় কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মদকে সতর্ক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট সৈয়দ রাশেদুল আলম এ আদেশ দেন।

অভিযোগে বলা হয়, কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মহসিন আলী আসামীর স্বজনদের দারা প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত প্রসিকিউশন রিপোর্ট তৈরি করে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তড়িঘড়ি করে উপস্থাপন করে সহিংসতা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুর জব্বারকে মুক্তি পেতে সহযোগিতা করেছেন।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ মে সকাল ১০টার দিকে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর চৌমুহুনী এলাকায় নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনাকালে চৌমুহুনী দারুল উলুম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক জামায়াত কর্মী আব্দুল জব্বার, আব্দুস সামাদ ও আব্দুস সাত্তারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বিকেলে তিন আসামীকে ভ্রাম্যমান আদালতে হাজির করা হলে বিচারক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মদ মোবাইল কোর্ট ২০০৯ আইনের ১৪৭ ধারায় তাদের প্রত্যেককে দু’ বছর করে বিনাশ্রম কারাদ- দেন। তিনজনের মধ্যে আব্দুর জব্বারের আদেশপত্রে( মোবাইল কোর্ট কেস নং- ৮১/১৪) সাজা দেওয়ার তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।

সূত্রটি আরো জানায়, এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আসামী আব্দুর জব্বারের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আপিল (ক্রি.মিস আপিল ৯০/২০১৪) করেন তার আইনজীবী। তিনি তার আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন যে, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সূযোগ না দিয়ে, ১৪৭ ধারার বাস্তব ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা না করে, আইন ও ঘটনার ভুল ব্যাখা দিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একজন আসামীর পক্ষে দণ্ডবিধি ১৪৭ ধারায় দণ্ডাদেশ প্রদান আইনগত গ্রহণযোগ্য নয় বলে তার মক্কেল আব্দুর জব্বারের খালাস দাবি করেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মামলার নথি ও সাক্ষী পর্যালোচনা শেষে উল্লেখ করেন যে, উপপরিদর্শক মহসিন আলী তরফদার নির্ধারিত ফর্মে (সংঘটিত অপরাধের বিবরণ) স্থানে ‘৫/৬জন সঙ্গীয় দল বল নিয়ে হাতে লাঠি সোডা, রড দারা দাঙ্গা/নাশকতা সৃষ্টি করেন। এ কারণে ১৯৯০ আইনের ১৯(১)/৭(গ) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যা’ ভ্রাম্যমান আদালতে বিচার্য। একই প্রসিকিউটিং অফিসার প্রসিকিউশান রিপোর্টের ছকে অপরাধের বিবরন স্থানে ‘দাঙ্গা /নাশকতা সৃষ্টি’ লঙ্ঘিত আইন দণ্ডবিধি ১৪৭ এবং শাস্তির ধারা ১৪৭ দণ্ডবিধি উল্লেখ করেছেন । ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক নিজে জব্দ তালিকা প্রস্তুত না করে বা তার সম্মুখে জব্দ তালিকা প্রত্যয়ন বিধি অনুসরন করেননি। ফলে তিনি উপপরিদর্শক মহসিন আলীর দাখিলকৃত দায়সারা প্রসিকিউশন যাচাই বাছাই না করে তর্কিত দণ্ডাদেশ প্রদান করেছেন যা আইনের চরম লঙ্ঘন বলে আদালত মনে করে।

আদেশে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক তারিখ না লিখে আইনি প্রক্রিয়াকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন মর্মে ওই রায় ন্যয় বিচার পরিপন্থী উল্লেখ করে গত ৫ আগষ্ট আাসামী আব্দুর জব্বারকে খালাস দেওয়া হয়।

(আরকে/এইচআর/আগস্ট ২১, ২০১৪)