বরগুনা প্রতিনিধি : দুই মাস আগ থেকে ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও এখনও সাগর কিংবা নদীর মোহনায় দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশ। ভরা মৌসুমে সাগর ও নদ-নদীতে ইলিশের আকাল থাকায় অনেকটা নিরাশ হয়ে পড়ছে বরগুনা উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা । তবে মৌসুম শুরুর পর থেকেই চাঁদার দাবিতে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের তান্ডব অব্যাহত থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের জেলেরা।

একের পর এক হামলা-গুলিবর্ষণসহ মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের ঘটনায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে সাহস পাচ্ছে না এ অঞ্চলের জেলেরা। গত ২ মাসে বঙ্গোপসাগরে ৭ শতাধিক জেলে ট্রলার অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া দাবিকৃত চাঁদা ও মুক্তিপণ না পেয়ে জেলেদের বুকে চালানো হচ্ছে গুলি। প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম শুরুর আগ থেকেই বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের তান্ডব শুরু হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশানুরূপ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এ কারণেই প্রতিনিয়ত অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও দলদস্যুদের নির্যাতন বেড়েই চলেছে বলে জানায় জেলেরা। এতে জীবন বাঁচাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই জেলেরা মোবাইল ব্যাকিংয়ের মাধ্যমে জলদস্যুদের কাছ থেকে টোকেন সংগ্রহ করছে। টোকেন ছাড়া সাগরে মাছ ধরতে গেলে জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হতে হয় বলে জানায় একাধিক জেলে।

সূত্র জানায়, সাধারণত প্রতিবছর বৈশাখ মাস থেকেই সাগরে কিংবা নদীর মোহনায় কম বেশি ইলিশ ধরা শুরু হয়। প্রায় ছয় মাস ধরে আশ্বিন মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সাগর ও নদ-নদীতে টানা ইলিশ শিকার চলে। তবে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই সাগর কিংবা নদ-নদীতে ইলিশের দেখা মেলেনি।
উপকূলের ইলিশ মোকামের ব্যবসায়িরা জানান, জেলেরা এখন গভীর সাগরে মাছ ধরতে যেতে চাইছে না। এ কারণে মোকামগুলোতে ইলিশের দেখা নেই। তিনি বলেন, গভীর সাগরে মাছ ধরতে হলে জলসদ্যুদের টোকেন নিয়েই যেতে হয়। অন্যথায় লাশ হয়ে ফিরতে হয়। এ কারণে আতঙ্কে জেলেরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে চাইছে না।
তিনি আরো জানান, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার মৎস্যবন্দর আলীপুর-মহিপুর, ফকিরহাট, বরগুনা, পাথরঘাটা ও কুয়াকাটা এলাকায় লক্ষাধিক জেলে ট্র্লার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এসব জেলের ধরা মাছ দেশের মৎস্য চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে। এসব জেলে পরিবারের লাখ লাখ মানুষ মাছের ওপর নির্ভরশীল।

মহিপুর মৎস্য আড়ত্দার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিমাই চ›ন্দ্র দাস জানান, কোটি কোটি টাকা জেলে ট্রলার মালিকদের দাদন দিয়ে রাখলেও জলদস্যুদের ভয়ে তারা সাগরে মাছ শিকার করতে যেতে চাইছে না। এ অবস্থায় তাদের এখন চরম দুরবস্থা দেখা দিয়েছে।

(এমএইচ/জেএ/আগস্ট ২১, ২০১৪)