চৌধুরী আবদুল হান্নান


চিরদিন অন্যের দ্বারা শাসিত, শোষিত একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দেয়ার চেয়ে বড় কোনো অবদান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ এখন সমার্থক । জন্মশত বার্ষিকী পালনকালে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে অসাধারণ ২ টি ঘটনা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই।

পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্বিচারে গণহত্যা ও নারী নির্যাতন থেকে বাঁচতে এক কোটি শরনার্থী ভারতের মাটিতে আশ্রয় নেয়ায় উদ্ভুত সমস্যায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বের কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ভ্রমন করেছিলেন তিনি। এর একটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন সহযোগিতা পাওয়ার কোনো রকম সম্ভাবনা নেই — তা নিশ্চিত জেনেও কেনো ইন্দিরা নিক্সনের দেশে ছুটে গিয়েছিলেন ?

এর একটা সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়েছিল সমগ্র দুনিয়ায়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সশস্র সেনারা যখন নিরস্র বাঙালিদের ওপক গণহত্যা চালাচ্ছে আর স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধরত একটি জনগোষ্ঠীর পক্ষে না দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র পক্ষ নিলো আক্রমনকারী দেশ বর্বর পাকিস্তানের। বিশ্ব বিবেকের বিপরীতে দাঁড়ানো আমেরিকার অমানবিক দৃষ্টভঙ্গি নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়লো যা আর একবার প্রত্যক্ষ করলো বিশ্ব।

দ্বিতীয়ত: ভেটো পাওয়ারের অধিকারী দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের দ্রুত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর (আগস্ট, ১৯৭১), যার ফলে আমেরিকা-চীনের প্রভাবে নিরাপত্তা পরিষদে উথ্থাপিত বাংলাদেশ বিরোধী প্রস্তাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন কয়েকবার ভেটো প্রয়োগ করে বাংলাদেশের নিশ্চিত বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখে।ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় এই চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল আর সোভিয়েত ইউনিয়ন পাশে না থাকলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের আন্তরিজাতিক নিয়ন্ত্রণ ইন্দিরার একক হাতে থাকতো না, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বরাজনীতির এক অগ্নিকান্ডে পরিনত হতে পারতো।

ইন্দিরা গান্ধীর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা ত্বরান্বিত হয়েছিল। অন্যথায়, ৯ মাসের পরিবর্তে ৯ বছরও লাগতে পারতো যা অনেকেই মনে করেন ।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।