ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : আজ শালিহর গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে হানাদার পাকবাহিনী গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করেছিল ১৩ জনকে এবং ধরে নিয়ে গিয়েছিল ইউপি চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের পিতা ছাবেদ হোসেনকে। যিনি আর কোনোদিন ফিরে আসেননি। স্বজনরা আজও খুঁজে ৭১’র সালে হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়-স্বজনকে। সেদিন অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগও করা হয়। যাদেরকে  স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও পুনর্বাসিত করা হয়নি।

জানা যায়, ১৯৭১’র সালের এই দিনে ময়মনসিংহ থেকে মোহনগঞ্জগামী ট্রেন বিসকা স্টেশনের অদূরে শালীহর গ্রামে এসে থেমে যায়। পাকবাহিনীর দু’টি প্লাটুন একটি দক্ষিণমুখী আরেকটি উত্তরমুখী যাত্রা করে। উত্তরে এসেই ২১আগস্ট ছাবেদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ধরে নিয়ে যায়। পাকবাহিনী আশুতোষ রায় মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে প্রথম অগ্নি সংযোগ করে। এরপর শালীহর গ্রামের ৪০টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। বিসকা ঠাকুর বাড়ীর রেন্ট্রি গাছতলায় কোমরে দড়ি বেঁধে ৩শ মানুষকে আটক করে চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। সেখানে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এমন ১৩ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তাঁরা হলেন মোহিনী কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র পণ্ডিত, নরব আলী, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র দাস, তারিনী মোহন দাস, খৈলাশ চন্দ্র দাস, শক্রোগ্ন দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র দাস, কর মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র দাস, কামিনী মোহন দাস। শালীহর বধ্যভূমিতে গ্রামবাসীকে ডেকে এনে বন্ধুকের বাট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে চালানো হয় নির্যাতন। পাকবাহিনীর আক্রমণে পুরো গ্রামটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়।

এছাড়াও বোকাইনগর ইউনিয়নের অষ্টঘর গ্রামে থানা আ’লীগের সভাপতি মৃত জমসেদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক মৃত আব্দুস ছালাম ফকির, হামিদ ভূঁইয়া, হেকিম ভূঁইয়াসহ শতাধিক ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। বেতান্দর গ্রামের মুসলেম উদ্দিন, আবু ছিদ্দিক, আবুল কালাম, জহর আলী, আ. জব্বার, সুলতান মিয়া ও ভাদের গ্রামের মফিজ উদ্দিন, আ. জলিল, আব্দুল হামিদ, আব্দুল আজিজসহ পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। সহনাটী ইউনিয়নের বাঙ্গুরহাটী গ্রামের আব্দুল মুন্নাফ তালুকদারের বাড়িসহ হতিয়র পালপাড়া শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। মাওহা ইউনিয়নের ধেরুয়া কড়েহা গ্রামের ছৈয়দ আলীর বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনী–রাজাকাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে রাজাকার ও পুলিশের ৮ জন সদস্য নিহত হয়।

শালীহর বধ্যভূমিতে শহীদের আত্মার স্মৃতি রক্ষায় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেন। তবে ৭১’র এই দিনে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের আজও পুর্ণবাসিত করা হয়নি। অধিকাংশ পরিবার অতিশয় কষ্টে দিনযাপন করছে। বাংলা তারিখ ঠিক থাকলেও ইংরেজী তারিখ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আশুতোষ রায়ের তথ্যমতে ২২আগস্ট, মুক্তিযোদ্ধা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসিমের মতে ২১আগস্ট এ ঘটনা সংঘটিত হয়।

(এসআই/জেএ/আগস্ট ২১, ২০১৪)