লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি এখন নিজেই রোগী হয়ে আছে। এখানে ভর্তি হওয়া রোগীরা সুচিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিদিন চিকিৎসকরা রোগীদের নামমাত্র পরিদর্শন করেই চলে যাচ্ছেন। তারা বেশি সময় দিচ্ছেন শহরের ক্লিনিকগুলোতে। এ অবস্থায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অসহায় রোগীরা। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তবে সুরম্য কমপ্লেক্সের বাইর থেকে দেখলে ভেতরের অবস্থান বোঝার উপায় নেই।

অভিযোগে জানা গেছে, এ হাসপাতালের বাথরুম-টয়লেট সমস্যা ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট রয়েছে। এজন্য রোগীদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হয় কমপ্লেক্সের বাইরে গিয়ে। আর পানি পান করতে যেতে হয় সামনের দোকানে। শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. কবির দুর্গন্ধযুক্ত গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অধিকাংশ রোগীই অসচেতন। ঠিকমত টয়লেট ব্যবহার করতে পারেনা। একারণে বেগ পেতে হয়। এছাড়া পুরো হাসপাতালে তিনজন সুইপার কাজ করে।
রোগীর অভিভাবক দেনায়েতপুর গ্রামের তাছলিমা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালের এ দুরাবস্থা বাইরে থেকে দেখে বুঝাই যায়না। হাসপাতালটি বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাট।’
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র জানায়, এটি ৩১ শয্যা থেকে ২০০৬ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর দিনদিন রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রতিদিন বর্হিবিভাগে ৩০০ থেকে ৪০০, জরুরি বিভাগে ৩০-৩৫ ও প্রতিমাসে গড়ে ১৫০-২৩০ রোগী বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়। এছাড়া গত ৬ মাস ধরে গড়ে প্রতিমাসে ২৫টি সিজার অপারেশন করা হয়। এ কমপ্লেক্সের উল্লেখযোগ্য- জুনিয়র কনসালটেন্ট (এ্যানেসথেসিয়া)-১, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি)-১, ডেন্টাল সার্জন-১, সহকারি সার্জন-২, অফিস সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক-৩, এমটি (রেডিও গ্রাফী)-১, এমপি (ল্যাব)-১, এমপি ফার্মাসিস্ট-১, স্বাস্থ্য সহকারি-১২, জুনিয়র মেকানিক-১, মেডিকেল টেকনোলজি (ফিজিও)-১, এমএলএসএস-১, নিরাপত্তাকর্মী-১ ও সুইপার-১ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালে কেমন সেবা পাচ্ছেন রোগীরা- এনিয়ে কথা হয় পৌর শহরের দেনায়েতপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আলী আহম্মদের সঙ্গে। তিনি জানান, নিজে এবং পরিবার অসুস্থ হলে বাড়ির পাশের প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এ হাসপাতালটি নানা অব্যবস্থাপনা এবং হাসপাতালে রোগীদের সময় না দিয়ে তারা প্রাইভেট ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকেন। প্রায় ১৫দিন আগে মারপিট করে তার এক আত্মীয় হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনঘণ্টা পর চিকিৎসক এসে তাকে দেখেন। সস্তোষজনক সেবা না পেয়ে তিনি পরে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবিষয় একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনো লাভ হয়নি।
রোববার সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রত্যেক পুরুষ ও নারীর বেডে রোগীর স্বজনদের ভিড় লেগে থাকে। গাদাগাদি করে তারা উচ্চ-স্বরে কথা বলছে। পুরুষদের জন্য কমপ্লেক্সের পুরাতন ভবনে ২টি টয়লেট ও ২টি গোসলখানা রয়েছে। সেখানে কোনো বৈদ্যুতিক বাতি নেই। টয়লেটের সামনে দুর্গন্ধ। দেখলে মনে হবে কয়েক বছরও সেখানে পরিষ্কার করা হয়নি। এ বিষয়ে কথা হয় সেবিকা নাছিমা জানান, ৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রায়ই ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এজন্য ময়লা-আবর্জনা বেশি হয়। এছাড়াও হাসপাতালে এক শ্রেণীর দালালদের দৌরাত্ম রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা খালেদ বলেন, সরকারের স্বাস্থ্য খাতে যতগুলো কর্মসূচী আছে। তার সবগুলোই আমাদের এখানে রয়েছে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ভালো অবস্থানে রয়েছে। রোগীরা হাসপাতালে সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট নিরসন করতে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ চেয়ে চিঠি মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
(এমআরএস/এএস/এপ্রিল ২০, ২০১৪)