ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহ শহরে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ। শব্দদূষণজনিত সমস্যায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে শহরবাসী। অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার, ও উচ্চ স্বরে মাইকিং এই শব্দদূষণের মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, শব্দদূষণ শিশু, অন্ত:সত্ত্বা ও হৃদ্ রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের ২০২০ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শব্দের মাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে শব্দের সহনীয় মাত্রা ৬০ ডেসিবল পেরিয়ে গেছে। পোস্ট অফিস মোড়ে ৮২ ডেসিবল, হামদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৭৮, মুজিব চত্বর এলাকায় ৭৭, আরাপপুর এলাকায় ৭৫, নতুন রাস্তা মোড়ে ৭৪, কেসি কলেজ এলাকায় ৭৩, মর্ডান মোড়ে ৭২, হাটের রাস্তার এলাকায় ৭০, চাকলাপাড়া এলাকায় ৬৪ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা।

শব্দদূষণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে নীরব এলাকায় দিনে ৪৫ ডেসিবল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবলের মধ্যে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাসিক এলাকায় এই মাত্রা দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবল। এ ছাড়া বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবল, শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবল ও রাতে ৭০ ডেসিবল এবং মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবল শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

নিয়মমালা লঙ্ঘনের দায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে প্রথমবার এক মাস কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান আছে। পরবর্তী সময়ে একই অপরাধে ছয় মাস কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান যুক্ত হয়েছে।

ঝিনাইদহ বিআরটিএ সার্কেলের সহকারী পরিচালক বলেন, ‘আমরা নিয়মিত জরিমানা করছি এবং সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালাচ্ছি। তবে মোটরযান আইনে নিষিদ্ধ হর্ন ব্যবহারে মাত্র ১০০ টাকা জরিমানার বিধান আছে। এই আইনে জরিমানা করলে তা দিতে কারও গায়ে লাগে না। শব্দদূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করলে সুফল মিলবে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মিশ্র এলাকায় শব্দের স্বাভাবিক মাত্রা ৬০ ডেসিবলের বেশি হলে মানুষের সাময়িক বধিরতা এবং শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবল হলে তা স্থায়ী বধিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ ডা: ইমামুল হক ডেভিড বলেন, ক্রমাগত শব্দদূষণে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত শব্দ স্নায়ু দুর্বল করে, মাথা যন্ত্রণা, অস্থিরতা ও কর্মদক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে।

যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইদ আনোয়ার জানান, ঝিনাইদহ শহরে শব্দের মাত্রা মানমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে দূষণ পর্যায়ে চলে গেছে। আইন প্রয়োগে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা ছাড়া এই দূষণ রোধ সম্ভব না।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০১, ২০২১)