স্পোর্টস ডেস্ক : সিডনি টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা নিজেদের করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ এবং ভারতীয় ওপেনার শুভমান গিল। দু’জনই জায়গা করে নিয়েছেন রেকর্ডের পাতায়।

ভারতের বিপক্ষে চলমা সিরিজের তৃতীয় টেস্টে এসে অবশেষে রানের দেখা পেয়েছেন স্মিথ। অ্যাডিলেডে ১ ও ২ এবং মেলবোর্নে ০ ও ৮ রানে আউট হওয়ার পর ৩১ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যানের অফ-ফর্ম নিয়ে আলোচনামুখর হয়ে ওঠেছিলেন সমালোচকরা।

তবে সিডনিতে দ্বিতীয় দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন স্মিথ। তার গুরুত্বপূর্ণ সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করেছে অস্ট্রেলিয়া।

২ উইকেটে ১৬৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে অজিরা। আগেরদিন ৬৭ রানে অপরাজিত থেকে স্বাগতিকদের পথ দেখাচ্ছিলেন মার্নাস লাবুশানে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতেও স্মিথকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে থাকতে রবীন্দ্র জাদেজার বলে আজিঙ্কা রাহানের হাতে বন্দী হন লাবুশানে। ভাঙে ১০০ রানের জুটি। লাবুশানের ১৯৬ বলে ৯১ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১ চারে।

এরপর ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকেন স্মিথ। অবশ্য তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ম্যাথু ওয়েড (১৩), ক্যামরুন গ্রিন (০) ও অধিনায়ক-উইকেটরক্ষক টিম পেইন (১)। তবে তাতেও আটকায়নি স্মিথের সেঞ্চুরি। আগেরদিন সিরিজে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পাওয়া ডানহাতি ব্যাটসম্যান ইনিংসের ৯৮তম ওভারে নবদ্বীপ সাইনির শেষ বলে ৩ রান নিয়ে তিন অঙ্কের ঘরে পা রাখেন। আগেরদিন ৩১ রানে অপরাজিত ছিলেন স্মিথ।

এই সেঞ্চুরিতে বিরাট কোহলি, গ্রায়েম স্মিথ ও অ্যালান বোর্ডারের পাশে বসলেন তিনি। এই চারজনের নামের পাশে আছে ২৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি। এর আগে ২৬ টেস্ট সেঞ্চুরিতে গ্যারি সোবার্সের সঙ্গে চেয়ার ভাগাভাগি করছিলেন স্মিথ।

তবে ২৭তম সেঞ্চুরি করার পথে ইনিংসের হিসেবে কোহলি (১৪১), শচীন টেন্ডুলকার (১৪১), সুনীল গাভাস্কার (১৫৪) ও ম্যাথু হেইডেনদের (১৫৭) চেয়ে এগিয়ে আছেন ৩১ বছর বয়সী ডানহাতি ব্যাটসম্যান। স্মিথের ওপরে আছেন কেবল ডন ব্রাডম্যান। ক্রিকেট কিংবদন্তি ২৭ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কেবল ৭০ ইনিংসে। সেখানে স্মিথ পেলেন ৭৬ টেস্টে ১৩৬ ইনিংসে এসে।

এই সেঞ্চুরিতে আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে সর্বোচ্চ অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন স্মিথ। টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে তার সমান টেস্ট সেঞ্চুরি আছে গ্যারি সোবার্স (৩০ ইনিংস), ভিভ রিচার্ডস (৪১ ইনিংস) ও রিকি পন্টিংয়ের (৫১ ইনিংস)। তবে মাত্র ২৫ ইনিংসেই এই রেকর্ডটি গড়েন স্মিথ।

অস্ট্রেলিয়ার শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন তিনি। জাদেজার সরাসরি থ্রো-তে রানআউট হওয়ার আগে ২২৬ বলে ১৩ চারে করেছেন ১৩১ রান। শেষদিকে তাকে সঙ্গ দেন মিচেল স্টার্ক (২৪)। জাদেজার চতুর্থ শিকার হন নাথান লায়ন (০)। ১ রানে অপরাজিত ছিলেন জশ হ্যাজলউড।

ভারতের হয়ে ৬২ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন জাদেজা। টেস্টে এটি তার তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার।

প্রথম ইনিংস শুরু করে ভাল অবস্থানে আছে ভারতও। ২ উইকেট হারিয়ে ৯৬ রানে দিন শেষ করেছে তারা। ২৪২ রানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল তৃতীয় দিন শুরু করবে সফরকারীরা। অপরাজিত হিসেবে দিন শেষ করেছেন চেতশ্বর পুজারা (৯) ও অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে (৫)।

এর আগে ভারতকে দারুণ শুরু এনে দেন রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। তাদের ৭০ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙেন হ্যাজলউড। রোহিত ফেরেন ২৬ রানে। তবে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ফিফটির দেখা পেয়েছেন গিল (৫০)। ভারতীয়দের মধ্যে চতুর্থ কনিষ্ট ক্রিকেটার হিসেবে এশিয়ার বাইরে টেস্ট ফিফটি পেলেন তিনি।

১৯৮২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম এই রেকর্ডটি গড়েন রবী শাস্ত্রী। তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর ৪৪ দিন। এখনও অক্ষত আছে রেকর্ডটি। গিল ফিফটি করলেন ২১ বছর ১২২ দিন বয়সে। তার ওপরে আছেন মাধব আপ্তে (২০ বছর ১০৮ দিন ) এবং পৃথ্বি শ (২০ বছর ১১২দিন)।

দু’দলের চার ম্যাচের বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজ সমতায় আছে ১-১ ব্যবধানে। অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে ৮ উইকেটে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টে একই ব্যবধানে জিতে সফরকারী ভারত।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০৮, ২০২১)