আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মহামারি নিয়ন্ত্রণে দ্রুততম সময়ে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য এবার ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জাতিসংঘের কাছ থেকে আসা প্রস্তাবে ইতিবাচক জবাব দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থাটিকে জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পরিচালিত কোভ্যাক্স কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট ফাইজার এবং জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনা ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী কি না।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, আমাদের অফিস বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সরবরাহ, বিতরণ ও মজুতসহ নিশ্চয়তার পরিপূর্ণ একটি পরিকল্পনা জমা দেয়ার বিষয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে জবাব দিতে হবে আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে।

ফাইজারের ভ্যাকসিন তিনধাপের ট্রায়ালে অভাবনীয় সাফল্য দেখালেও জটিলতা রয়েছে এটি সংরক্ষণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে। ভ্যাকসিনটি সবসময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। তাছাড়া, পূর্ণ সুরক্ষার জন্য এর দু’টি ডোজ গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ১৭২টি দেশে ২০০ কোটি ডোজ বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হয়েছে মূলত ভারতের কাছ থেকে নির্ধারিত সময়ে ভ্যাকসিনপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায়। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের এশীয় অঞ্চলের উৎপাদক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ।

চুক্তি অনুসারে, আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে টানা ছয়মাস ৫০ লাখ ডোজ করে মোট তিন কোটি ডোজ দেয়ার কথা সিরামের। এর মূল্য হিসেবে ইতোমধ্যেই অগ্রিম ৬০০ কোটি টাকা পাঠিয়ে দেয়ার কথাও জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

তবে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত দেশ ভারত নিজেদের চাহিদা মেটাতে সম্প্রতি ভ্যাকসিন রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলে খবর ছড়ায়। এ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয় ভারতীয় ভ্যাকসিনপ্রত্যাশী দেশগুলোতে। অবশ্য পরে নিষেধাজ্ঞার কথা পুরোপুরি মিথ্যা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ বিষয়ে সিরাম ইনস্টিউটের বক্তব্যে বাংলাদেশের ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির সময় নিয়ে আবারও ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সিরামের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, ভারত সরকার কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি ঠিকই, তবে তাদের কাছে রফতানির অনুমতিও নেই। এ কর্মকর্তার কথায়, সিরাম ইনস্টিটিউট বিদেশে ভ্যাকসিন রফতানির অনুমতি পাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, এটি পেতে কয়েকমাস লেগে যেতে পারে।

তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, ভারতে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি শুরুর ১৪ দিনের মধ্যেই সেটি রফতানি শুরু হবে। জানা গেছে, আগামী ১৬ জানুয়ারি দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি শুরু করছে ভারত।

এর আগে, চলতি মাসের শুরুতেই একসঙ্গে দু’টি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় ভারতীয় প্রশাসন। এর একটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড, অপরটি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। অক্সফোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে কোভিশিল্ড উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এটি নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য না হলেও ভারতীয়দের আবিষ্কৃত কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কারণ সেটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই এখনও শেষ হয়নি, নেই সুরক্ষা সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্যও। বিভিন্ন মহলের দাবি, কোভ্যাক্সিনকে তড়িঘড়ি অনুমোদন দিয়ে একপ্রকারে বিপদ ডেকে আনছে ভারত সরকার।

বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে একটি মাত্র উৎস যথেষ্ট নয়। আমাদের বেশ কয়েকটি উৎস দরকার এবং সরকারকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আনাদোলু এজেন্সি, বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০২১)