রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মধুপুরে অধিক উপার্জনের আশায় আনারস চাষে ঝুকছে চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়া থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করছেন মধুপুর হলুদিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, আউসনারা নাইন পাড়া গ্রামের শামছুল, আউসনারা গ্রামের হুরমুজ, আবুল কাশেম, সহ স্থানীয় আনারস চাষিরা। 

আনারস গাছ থেকে কুড়ি ভেঙ্গে বিভিন্ন ধরনের চারার মাধ্যমে আনারসের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। চারার বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে রয়েছে পার্শ্ব চারা, বোঁটার চারা, মুকুট চারা ও গুঁড়ি চারা ইত্যাদি। এর মধ্যে পার্শ্ব চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

কৃষকদের মতে, ভালো ফলন পেতে মাটি ঝরঝরে করে মই দিয়ে জমি সমতল করতে হয় যাতে বৃষ্টির পানি কোন স্থানে জমে না থাকতে পারে। আনারস চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হয়। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করলে ফলন ভাল হয়। তারপর জমি থেকে ১৫ সে.মি. উঁচু এবং এক মিটার প্রসস্থ বেড তৈরি করতে হয়। এক বেড থেকে অপর বেডের ৫০-১০০ সে.মি. দূরত্ব রাখতে হয়। এক মিটার প্রসস্থ বেডে দুই সারিতে চারা রোপণ করতে হয়। প্রত্যেক সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি.।
আনারস চারা একটু বড় হলে পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। নিজস্ব উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে পোকা দমন করা সম্ভব না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নিয়ে পোকার আক্রমন থেকে আনারস চারা রক্ষা করা যেতে পারে।

আনারসের বেশ কয়েকটি জাতের মধ্যে হানিকুইন উল্লেখযোগ্য। হানিকুইন ডলডুপি হিসেবেও পরিচিত। চোখ সূচালো ও উন্নত। গড় ওজন প্রায় ১ কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের। হানিকুইন বেশ মিষ্টি আনারস অনেকটা রসালো। পাকা আনারসের শাঁস হলুদ রঙের। সবচেয়ে বড় আকারের জাত হচ্ছে জায়ান্টকিউ। নামের সাথে মিল রেখেই এর আকারও বেশ বড়। পাকা অবস্থায়ও এ আনারসের রং সবুজাভ শাঁস হালকা হলুদ। চোখ প্রসস্থ ও চেপ্টা। গাছের পাতা সবুজ ও প্রায় কাটাবিহীন। গড় ওজন ২ কেজি। অপর আরেকটি জাত হলো ক্যালেন্ডুলা। এটি মাঝারি আকুতির এবং খেতেও মিষ্টি। ওজন ১ থেকে দেড় কেজি। আরও একটি উল্লেখযোগ্য জাত হচ্ছে ঘোড়াশাল। পাকা আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা হয়। চোখ প্রসস্থ। পাতা কাঁটা বিশিষ্ট, চওড়া ও ঢেউ খেলানো থাকে। গড় ওজন ১ থেকে ১.২৫ কেজি। এগুলো ছাড়া দেশীয় আরও কয়েকটি জাত আছে যেগুলো বাড়ির আঙিনার আশপাশে রোপন করা যায়।

মধুপুর উপজেলার হলুদিয়া গ্রামের আনারস চাষী নজরুল ইসলাম জানান, আমি সরকারী চাকুরির পাশাপাশি কয়েক বছর যাবৎ বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ করি। এবছরও ৯ বিঘা জমিতে আনারস চাষের জন্য প্রস্তুত করেছি। ২-৩ বিঘাতে চারা রোপন করা শেষ হয়েছে। বাকী জমিতে চারা রোপন শুরু করছি। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে বাম্পার ফলনের আশা করছি। বাম্পার ফলন হলে আর্থিক ভাবে লাভবান হবো আশা করি।

মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান বলেন, এ বছর মধুপুর অঞ্চলে ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আনারসের চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫’শ হেক্টর জমিতে অতিরিক্ত আনারস চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আনারসের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২১)