রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চাকরিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রলোভন দেখিয়ে এক গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের সহকারি ইন্সট্রাক্টর ইয়াছিন আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দলের এক গৃহবধূ  বৃহষ্পতিবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ইয়াছিন আলী আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে ও বর্তমানে শহরের মুনজিতপুরে বসবাস করেন। মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, নির্যাতিতা এক নারীর স্বামীর বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলার নলিয়ান গ্রামে হলেও ঘের ব্যবসা ও বিবাহ সূত্রে তিনি শ্বশুরবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। আশাশুনি সদরের চাপড়ার বাউশালীর আব্দুল হান্নানের ছোট ভাই খোকনের সঙ্গে ওই নির্যাতিত নারীর ননদের বিয়ে হয়। একই এলাকায় বসবাসের কারণে ইয়াছিন আলীর সঙ্গে নির্যাতিত নারীর স্বামীর পরিচয় হয়।

একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে ওই নারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ইয়াছিন আলী। এ সময় বাদিনী ওমানে কর্মরত ছিলেন। ইয়াছিন আলী রুপালী ব্যাংকের বড়দল শাখার এক কর্মকর্তার কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সময় চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের জমা রাখা স্বাক্ষরিত চেক সংগ্রহ করে নির্যাতিতা নারীর স্বামীর মাধ্যমে তারই আত্মীয় বাউশালীর আব্দুল হান্নানকে দিয়ে প্রতিপক্ষ বড়দল ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের পহেলা মার্চ আশাশুনি বিচারিক হাকিম আদালতে ২০ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের মামলা (সিআর-২২/১৬ আশা)করান বলে অভিযোগ। ওই মামলায় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে আব্দুর রউফের সাজা হওয়ায় তিনি ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন নেন।

২০১৭ সালের ১৯ মার্চ আদালত ১৯২(১) নং চালানে ১০ লাখ টাকা বাদি বা রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. সায়েদুজ্জামানের নামে পাশ করে আদালত। আব্দুর রউফের সঙ্গে মীমাংসার জন্য নির্যাতিতার স্বামীকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় একটি মোটর সাইকেল কিনে দেওয়ার কথা বলে আব্দুল হান্নানকে বুঝিয়ে জনতা ব্যাংকের বড়বাজার শাখায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন ইয়াছিন। সে অনুযায়ি আব্দুর রউফের দেওয়া ব্যাংকে যেয়ে অ্যাড. সায়েদুজ্জামানের হিসাব থেকে ১০ লাখ তুলে তা চেক ডিজঅনার মামলার বাদি আব্দুল হান্নানের হাতে দিয়ে ছবি তুলে নেওয়া হয় ও একটি সাদা কাগজে টাকা বুঝিয়া পাইয়াছি মর্মে রেভিনিউ স্টাম্পের উপর সাক্ষর করিয়ে নিয়ে তার কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

পরে ইয়াছিন তার অফিসের দু’জন কর্মচারিকে ডেকে এনে তাদের কাছে জমা দেওয়ার ফর্ম পূরণ করে ওই ১০ লাখ টাকা প্রাইম ব্যাংকের লাবনী মোড় শাখায় তার নিজ হিসাব নম্বরে জমা করান বলে অভিযোগ করা হয়। নির্যাতিতার স্বামীকে দেওয়া হয় ৭০ হাজার টাকা। ইয়াছিন আলী চাকুরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নির্যাতিতা নারীকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ওমান থেকে দেশে এনে তার সঙ্গে শুক্রবার ছুটির দিন দেখে অনৈতিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্যাতিতাকে বারবার কু’প্রস্তাব দিয়েও নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে ইয়াছিন তার স্বামীর কাছে রউফ চেয়ারম্যানের মামলা মীমাংসা বাবদ দেওয়া ৭০ হাজার টাকা ফেরৎ চান।

এ নিয়ে তিক্ততার একপর্যায়ে ইয়াছিন তার এলাকার এক সাংবাদিককে নিয়ে ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পরিচিত পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হোসেনকে দিয়ে বড়দলের বাড়ি থেকে আটক করান বলে অভিযোগ। এ সময় তার উপর অমানুািষক নির্যাতন চালিয়ে কয়েকটি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্টাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও একটি স্টাম্পে তিন মাসের মধ্যে এক লাখ টাকা পরিশোধের কথা লিখে সাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে ইয়াবার মামলা ও বিচারাধীন দু’টি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়। তিন মাসের মধ্যে ওই এক লাখ টাকা দিতে না পারায় একতরফা প্রতিবেদনে নির্যাতিতার স্বামীর নামে সাতক্ষীরার আমলী আদালত ৮ এ ১৬৪/২০ নং প্রতারণার মামলা করেন ইয়াছিন।

পাইকগাছা থানার দারোগা নাজমুলের সহযোগিতায় সাক্ষর করে নেওয়া অলিখিত স্ট্যাম্প ব্যবহার করে ইয়াছিন মানিকগঞ্জ জেলা সদরের এগারোশ্রী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাককে দিয়ে ইটভাটার লেবারের দু’ লাখ ২০ হাজার টাকা টাকা প্রতারণার অভিযোগে নির্যাতিতা, তার স্বামীসহ তিনজনের নামে মানিকগঞ্জ আমলী ৫নং আদালতে ( সিআর-৩৮/২০১৯) ইয়াছিন মামলা করান বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২০ আগষ্ট আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। নির্যাতিতা এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান।

একই ভাবে প্রভাব খাটিয়ে ইয়াছিন আলী খাগড়াছড়ি থানাধীন চৌরাংছড়ি গ্রামের শাহ আলমের ছেলে ফারুক হোসেনের অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলায়( জিআর-৫১/২০) তদন্তকারি কর্মকর্তা ওই থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহানুর আলমকে দিয়ে নির্যাতিতা নারীকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করিয়ে ইয়াছিন সাড়ে চার মাস জেল খাটান বলে ভুক্তবোগীদের অভিযোগ। এরপর থেকে ওই হত্যা মামলায় স্বামী পালিয়ে বেড়ালে গত ২৬ অক্টোবর রাতে নির্যাতিতাকে তার ঘরের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টা চালালে সন্তানরা জাপটে ধরে চিৎকার করলে ইয়াছিন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ওই নির্যাতিতা নারী।

জানতে চাইলে শনিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সদর রিসোর্স সেন্টারের সহকাাির ইনসট্রাক্টর ইয়াছিন আলী বলেন, ওই নারী ও তার স্বামীর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশৃুনি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শহীদুর রহমার ধর্ষণেে চেষ্টার ঘটনা সঠিক নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। পরে দেখা করে বিস্তারিত জানাবেন বলে জানা তিনি।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ১৭, ২০২১)