রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও রায়পুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীতে মাছ ধরতে জাল ফেলছিলেন জেলে নুর হোসেন (৪৯)। হিমেল বাতাস আর কুয়াশার মধ্যেও পেটের তাগিতে পানিতে নামতে হয়েছে তাঁকে। নুর হোসেন বললেন, ‘মনে হচ্ছে বরফ গলা পানিতে নেমেছি। ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। প্রতিদিনই নদীতে নামি কিন্তু আজকের মতো ঠান্ডা লাগেনি। আজ আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। আজ মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারি উপজেলার দেবীপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে এ চিত্র।

রাতে শীতের সঙ্গে কুয়াশা আর বেলা বাড়লে আলোঝলমলে সূর্যের আলো। সন্ধ্যায় হিমেল হালকা বাতাস। এভাবেই চলছিল পুরো পৌষ মাস। কিন্তু শুক্রবার পয়লা মাঘ থেকে জেঁকে বসেছে শীত। হঠাৎ চলে আসা ঠান্ডার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। গত কয়েক দিন ধরে দিনের বেলা স্বল্প সময়ের জন্য রোদের দেখা মিললেও সোমবার থেকে সারা দিনে দেখা মেলেনি সূর্যের।

গতকাল সোমবার থেকে সকালে হঠাৎ করে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় চারপাশ। যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চালাচল করতে শুরু করে। পরে বেলা ১১টার দিকে কুয়াশা ভেদ করে আকাশে সূর্য উঁকি দেয়। আজ মঙ্গলবারও সকাল থেকে কুয়াশায় ঢেকে যায় প্রকৃতি, সঙ্গে বইতে থাকে হিমেল বাতাস। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি।
রাায়পুর উপজেলার দেবীপুর, বামনী, চরপাতা, দক্ষিন রায়পুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারদিক কুয়াশায় ঢাকা। রাস্তায় লোকজনের চলাচল নেই বললেই চলে। প্রচন্ড ঠান্ডায় কাজে যেতে পারেননি অধিকাংশ দিনমজুর। খড়কুটো জ্বালিয়ে কেউ কেউ আগুন পোহাচ্ছেন। চট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে গবাদিপশুর শরীর।

উপজেলার পূর্বলাছ গ্রামের বাসিন্দা লনি বাবু বলেন, শীত আর বাতাসে বাড়ির বাইরে যাওয়া যায় না। কৃষিশ্রমিক সহিদুল ইসলাম বলেন, হাড়কাঁপানো শীত। সবাই কষ্টে আছে। অনেকে খড় জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। উপজেলা চর আবাবিল এলাকার আলি সর্দার, এলাকার রাস্তা নির্মাণশ্রমিক সুলতানা বেগম (৪৯) বলেন, ‘শীতে বাড়ির বাহির হওয়াই কঠিন। এই শীতে কাজ করব কেমন করে। শীতের জন্য বেকার বসে আছি।’

এদিকে অতিরিক্ত শীতের কারণে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হলেও কেউ কেউ বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরছেন।
রাায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাবরীন চৌধুরী বলেন, শীতার্ত মানুষের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও কম্বল আর শীতবস্ত্র বিতরণ করছে।

(পিকেআর/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০২১)