বাগেরহাট প্রতিনিধি : সুন্দরবনসহ উপকুলীয় এলাকার খাল-বিলে নির্বিচারে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে। একই সাথে অপরিকল্পিত ভাবে চলছে বাগদা ও গলদা চিংড়ি পোনা আহরণ। বিষ দিয়ে মাছ ধরে শিকারিরা ধ্বংস করছে বিভিন্ন মাছের পোনা । আর বনের অভ্যন্তরে খালের বিষাক্ত পানি পান করে মরে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী।

গত ১০ দিনে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরনখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে থেকে বন অভ্যান্তরের খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের অপরাধে ১৫ জনকে আটক করেছে বনরক্ষিরা। ভাবে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও চিংড়ি রেনু আহরণের ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীসহ মৎস্য ভাণ্ডার।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের ১’হাজার ৮’শ বর্গকিলোমিটার জলাভূমির মধ্যে ৮ শ বর্গ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র উপকুল ও বনের অভ্যন্তরে জলাভূমির আয়তন ৯৬০ বর্গ বর্গকিলোমিটার। মাত্র কয়েক বছর আগে এসব জলাভূমিতে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাছের উৎপাদন ছিলো ৪ মেট্রিক টনের বেশি। বছর জুড়ে বনের অভ্যন্তরে অপরিকল্পিতভাবে নেট জাল দিয়ে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ ও বিষ দিয়ে মাছ আহরন করায় ধ্বংস হচ্ছে অনান্য মাছের পোনা । সুন্দরবন অভ্যান্তরে খালে বিষ ও নেট জাল দিয়ে রেনু পোনা আহরনের নামে যারা মৎস্য ভান্ডার ধ্বংস করছে তারা দাবি করছে জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা এ কাজ করে চলছে।
সুন্দরবনে বনবিভাগের মাধ্যমে মৎস্য খাত থেকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হয়। অপরিকল্পিত ভাবে পোনা আহরণ ও মাছ শিকার করায় রাজস্ব আয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি ঘাটতি হচ্ছে বন্যপ্রাণী ও মৎস সম্পদের । কয়েক বছর আগেও দেশের বিশাল জনগোষ্ঠির চাহিদা পূরণ করলেও এখন উপকুলীয় অঞ্চলের হাট বাজারে সামুদ্রিক মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অনান্য বন্যপ্রাণী সুন্দরবনের উপকুলীয় এলাকায় এসে বনের অভ্যন্তরের নদী নালা খাল বিল ও হ্রদের এসব বিষাক্ত পানি পান করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। আর এভাবে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর প্রজনন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে।
সুন্দরবন পুর্ব বিভাগীয় কর্মকর্তা আমীর হোসেন চৌধুরী জানান, বনের অভ্যন্তরে বিষ দিয়ে মাছ শিকার ও রেনু আহরণ রোধে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি জন সচেতনতা সৃষ্টির করা প্রয়োজন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নারায়ন চন্দ্র মণ্ডল জানান, সুন্দরবনের একটি অংশ বাগেরহাট জেলার হলেও বাগেরহাট মৎস্য বিভাগের সেখানে কোন কর্তৃত্ব নেই। ওই এলাকা দেখভাল করে সুন্দরবন বিভাগ। তবে তিনি আরো জানান নির্বিচারে পোনা আহরণ ও মৎস্য শিকার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যেই ২’শ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। আর তাই সুষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী বনের অভ্যন্তরে মাছ আহরণ করা হলে আমিষ ও বন্যপ্রাণী বাচাঁনোসহ সব ধরনের ঘাটতি মিটিয়ে প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
(একে/এএস/আগস্ট ২৩, ২০১৪)