আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে উৎপাদিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনে ভরসা করতে পারছে না খোদ ভারতীয়রাই। দেশটিতে সরকারের আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভ্যাকসিন নিতে যায়নি। কর্মসূচি শুরুর প্রথম তিন দিনই এমন নাজুক পরিস্থিতি উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তথ্যে।

গত শনিবার থেকে ভারতে শুরু হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি। দেশটিতে তিন হাজারের মতো কেন্দ্রে একসঙ্গে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

প্রথম দফায় ভারতের চিকিৎসক, নার্স, অ্যাম্বুলেন্সচালক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা করোনার ভ্যাকসিন পাবেন। এরপর দেয়া হবে পুলিশ, সামরিক বাহিনীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের করোনাযোদ্ধাদের। প্রাথমিকভাবে প্রায় তিন কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি।

কিন্তু ভ্যাকসিন দেয়ার পর প্রথম তিন দিনে অন্তত ৫৮০ জনের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা জানিয়েছে ভারত সরকার। এছাড়া মারা গেছেন দুজন। যদিও তাদের মৃত্যুর সঙ্গে ভ্যাকসিন নেয়ার যোগসূত্র নেই বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত শনিবার উত্তর প্রদেশে ভ্যাকসিন নেয়ার পর মারা যান ৫২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তবে ভ্যাকসিনের কারণে নয়, তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার।

এছাড়া, কর্ণাটকে ভ্যাকসিন নেয়ার পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন ৪৩ বছর বয়সী আরেক লোক। তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত হচ্ছে।

ভারতীয় সরকার জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত তারা অন্তত ৩ লাখ ৮১ হাজার ৩০৫ জনকে ভ্যাকসিন দিয়েছে। তবে সরকারের এ উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া দিচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে আমন্ত্রণ পাওয়াদের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন মাত্র ৫৩ শতাংশ মানুষ।

দ্য হিন্দু পত্রিকা জানিয়েছে, তামিলনাড়ুতে ভ্যাকসিন গ্রহণের হার আরও কম, মাত্র ১৬ শতাংশ।

হরিয়ানার এক চিকিৎসক এএফপিকে জানিয়েছেন, রাজ্যটির রোহতাক জেলার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১০০ জনকে ভ্যাকসিন নিতে ডাকা হলেও হাজির হয়েছেন মাত্র ২৯ জন।

নাম না প্রকাশের শর্তে ওই চিকিৎসক বলেন, মানুষ অনেক ভয় পাচ্ছে। আমরা ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য কাউকে জোর করতে পারি না, এটা স্বপ্রণোদিত।

অবশ্য এ কর্মসূচির সফলতার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। দিল্লির করোনা টাস্কফোর্সের সদস্য সুনীলা গর্গ বলেন, এটি প্রাথমিক পর্যায় মাত্র। আমরা বুঝতে পারছি, প্রক্রিয়াটি কীভাবে সম্পন্ন হয় এবং অন্য ভ্যাকসিনগুলোর দাম কেমন- তা জানতে মানুষ অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, আত্মবিশ্বাস বাড়লে এর (ভ্যাকসিনগ্রহীতা) সংখ্যাও বাড়বে। তার জন্য আমাদের ভুল তথ্য আটকাতে হবে।

বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা সংক্রমিত দেশ ভারত সম্প্রতি একদিনে দুটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। এর একটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড, অপরটি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন। অক্সফোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে কোভিশিল্ড উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। এটি নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য না হলেও ভারতীয়দের আবিষ্কৃত কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কারণ সেটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই এখনও শেষ হয়নি, নেই সুরক্ষা সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্যও।

গত তিন দিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কোভিশিল্ড আর কারা কোভ্যাক্সিন নিয়েছিলেন, সেই তথ্য প্রকাশ করেনি ভারত সরকার। আল জাজিরা, হিন্দুস্তান টাইমস।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০২১)