ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ২০১১ সাল থেকে তিনি পলাতক। আদালত থেকে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না। অথচ কথিত এই পলাতক থেকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন। করছেন মাদক, সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ। ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে পুলিশের উপস্থিতিতে করছেন প্রতিবাদ সমাবেশ। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের সামনে উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বৈঠক করছেন। ঘুরছেন পুলিশের সামনেই বীরদর্পে। থানায়ও যাচ্ছেন তদবীর করতে। আবার আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই তিনি পেয়েছেন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের জেলার শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যানের পুরস্কার। এই ক্ষমতাধর চেয়ারম্যান হচ্ছেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন মালিতা।

জানা যায়, ২০১০ সালে ৭ জুলাই সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজার থেকে কাশিমনগর বাড়ি ফেরার পথে খালের ব্রীজের উপরে বোমা হামলায় মারাত্বক আহত হন গান্নার তৎকালিন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন মণ্ডল শান্তি। ঘটনার ৩দিন পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি বিস্ফোরক ও আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের শশুর সিরাজুল ইসলাম মালিতা। ঘটনার সাথে জড়িত ৮ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

গ্রেফতারকৃতরা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দির ভিত্তিত্বে মামলার ৯নং আসামি হয়ে যান নাসির মালিতা। হত্যা মামলার আসামী হয়ে তিনি গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর মামলার চার্জসীট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাতেও চেয়ারম্যান নাসির মালিতাসহ ১১জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালতে চার্জশিট জমা হলে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিচারক। সেই থেকে চেয়ারম্যান নাসির মালিতাসহ ৪ আসামী পলাতক।

এ ব্যাপারে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সবার সামনে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের চোখে নাসির পলাতক। বিষয়টি ঝিনাইদহ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের নজরে আসলে নতুন করে দুই মামলায় পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। দীর্ঘ ১০ বছরে হত্যা মামলা বিচার না পেয়ে হতাশা বিরাজ মামলার বাদি সিরাজুল ইসলাম মালিতা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এত বছর হয়ে গেল। আজও হত্যার বিচার হলো না। চেয়ারম্যান নাসির পলাতক দেখিয়েছে। কিন্তু সে নির্বাচন করলো। নির্বাচনে জিতলো। এলাকায় এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন মালিথা জানান, হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাদী পক্ষের সাথে ওই সময় মামলাটি আপোস মিমাংসা করি। আমি পলাতক নয়। তিনি বলেন আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে করে আমার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কাজের কারণে মামলার তদবীর করতে না পারার কারণে এমনটি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তো আমার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ২০, ২০২১)