রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কাঁচা বাঁশের সাঁকোটি শুকিয়ে গেছে। থরথর করে কাঁপে। কখন যে সাঁকোর বাঁশ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে! সাঁকো পার হতে গেলে সাঁকো দোলার তালে তালে বুক ধড়ফড় করে। তবে আশা আছে মনে, একদিন এখানে হবে ইট-পাথরের কালভার্ট ! এভাবেই দুর্ভোগ ও আশার কথা জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকালে তালার ঘোষনগরে যেয়ে দেখা গেছে, কপোতাক্ষ নদের ওপারে খুলনার কপিলমুনি এপারে সাতক্ষীরার তালার ঘোষনগর। ওপারের মানুষ এপারে, এপারের মানুষ ওপারে যেতে হয় ওই ভাঙা সাঁকো পার হয়ে। এখানে খেঁয়াঘাটে নৌকা পারাপারের কথা থাকলেও ঘাটের ইজারাদারা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে টোল আদায় করে। সাঁকোর খন্ড খন্ড চরাটগুলির কোনটাই এখন আর নিরাপদ নয়। বাঁধন না থাকায় তার উপর পা দিলেই রয়েছে গড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি। নেই ন্যুনতম কোন গার্ডার। এতে করে চলতি শীত মৌসুমে সন্ধ্যা নামতেই কুয়াশার প্রলেপ সাঁকোর পাটাতনগুলিকে পিচ্ছিল করে দেয়। এমন অবস্থায় সাঁকো দিয়ে মানুষ পারাপারে কোন রকম অসাবধানতায় পা সরে মালামালসহ পড়তে হয় পানিতে। এতে কোন রকম প্রাণে বেঁচে গেলেও শীতে ভেঁজা কাপড় ও সাথে থাকা মালামালসহ মূল্যবান জিনিষপত্র নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাঁকোটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সাঁকো পারাপারে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটলেও হুশ হচ্ছেনা কর্তৃপক্ষের।

তালা উপজেলার রথখোলা গ্রামের কুদ্দুস শেখ জানান, সাকো দিয়ে আমরা যখন পারাপার হই,দু’টাকাও নেয়,পাঁচটাকাও নেয়। আসতি-যাতি দশ টাকা খরচা হয়। এমনও হয়,দিনে ম্যালা বার যাতি-আসতি হয়। ব্রিজ না হলি আমাগের এইরাম কষ্ট হতিই থাকপে।

ঘাটের এপারে ঘোষনগর গ্রামের সোহরাব মোড়ল জানান, আমি দুধের ব্যপসা করি। পতিদিন দুধ নে ঘাট পার হওয়া লাগে। মাঝে মাঝে বাশের দোলায় দুধ পড়ি যায়। তাতে আমার খুব নোকসান হয়ে যায়।

কানাইদিয়া গ্রামের উত্তম হালদার জানান, টোল বেশি নিলেও আমরা সেইমতো সেবা পাইনে। ঝুঁকি নে পার হতি হই। যারা টাকা নেয়,তারা তো শক্ত করে বান্দে দিতি পারে। তা না দে শুধু টাকাই নিতেছ।

খলিলনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র ও কানাইদিয়া গ্রামের বাসিন্দা অরুণ কান্তি রায় জানায়,আমরা স্কুল ছাত্র হলেও টোল দেয়া থেকে রেহাই পাইনা। প্রতিদিন বেশ টাকা খরচ হয়। একটা ব্রিজ হলে এমন সমস্যা থেকে আমরা রেহাই পেতাম।

স্থানীয় ইউপি মেম্বর কালিদাশ অধিকারী জানান, খেয়াঘাটের বাঁশের সাঁকোটি চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঘাটের ইজারাদার টাকা নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু এটি মেরামতের করছে না।

এসব বিষয়ে ঘাটের ইজারাদার আব্দুল মালেক জানান, উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়ে তারা বৈধভাবে টোল আদায় করছেন। সাকোর যেসব জায়গা, ভঙ্গুরাবস্থা, সেসব জায়গা খুব দ্রুত ঠিক করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, তালার উপজেলার জালালপুর ও পাইকগাছা তালাসহ বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার মানুষের নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি দিয়ে পার হতে হয়। দুই উপজেলার হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে ব্রিজ নির্মাণ জরুরী। কয়েকবার জরিপও হয়েছে। কিন্তু আইনী জটিলতায় তা কার্যকর হয়নি। তিনি জনদুর্ভোগ লাঘবে ঘোষনগরে কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানান।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারিফ-উল-হাসান বলেন, আমি অতি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে জনস্বার্থে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২১, ২০২১)