রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সন্ত্রাসী মঞ্জুর নেতৃত্বে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কামদেবপুর গ্রামের লক্ষীপদ সাহার মাছের ঘের জবরদখল করে লুটপাটের পর বাসায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর এ জবরদখলের ১৫ দিনপর পুলিশ লক্ষীপদসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নেওয়ায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে কামদেবপুর গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে শুক্রবার সকালে কালিগঞ্জ উপজেলার কামদেবপুর গ্রামে গেলে নারায়ণ সাহা, নিমাই সাহা, ও জামিনী সাহা জানান, দুই দশক ধরে একই গ্রামের রমজান আলীর নিকট থেকে ৩০ বিঘা জমি হারি নিয়ে সেখানে মাছ চাষ ঘের করে আসছে লক্ষীপদ সাহা। জমির মালিককে প্রতিবছর হারির টাকাও দিয়ে আসছেন তিনি। দীর্ঘ ২০ বছর পরে এসে একই গ্রামের সন্ত্রাসী মুনজুর এই জমির মালিকানা দাবি করে আসছিল। এ নিয়ে থানায় বসাবসি হয়েছে কয়েকবার। মঞ্জু শালিস মানে না। একপর্যায়ে গত ২৬ ডিসেম্বর সকালে মঞ্জুর নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী লক্ষীপদ সাহার ঘেরের বাসায় লুটপাট ও ভাঙচুর শেষে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট করা হয় চিংড়ি , ভেটকি, পারসে, ট্যাংরাসহ ঘেরের পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মাছ।

বিষয়টি থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। উপরন্তু আর্থিক সুবিধা নিয়ে লক্ষীপদ সাহাসহ ১৫জনের নামে মঞ্জুরের দেওয়া মিথ্যা মামলা পুলিশ গত ১২ জানুয়ারি রেকর্ড করেছে। বিষয়টি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানালে ১৫ জানুয়ারি মঞ্জুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে লক্ষীপদ সাহার দেওয়া মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। তবে লক্ষীপদ সাহাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলায় গ্রামেরজ হিন্দু পরিবার গুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

লক্ষণ সাহার পরিবারের সদস্য রামপদ সাহা,চন্দ্র সাহা.ও সুকুমার সাহা জানান, যদি জমির মালিক যদি পরিবর্তন হয় তারা প্রকৃত মালিককে হারির টাকা দেবেন। নিয়ম অনুয়ায়ী প্রকৃত মালিক ঘেরে আসবে।এভাবে জবর দখল করবে কেন? আবার পুলিশ মিথ্যা মামলা নিয়ে সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করায় এ দেশ তাদের জন্য বসবাসের অনুপযোগী হবে।
ভাড়াশিমলা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আলেয়া খাতুনও নিজাম গাজী জানান, রমজান আলী দীঘর্ দিন এই ঘেরের ভোগদখল করে আসছে।

সম্প্রতি এই ঘেরে নিয়ে রমজান আলী ও মুঞ্জুর হোসেন উভয় পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদের বিচার কার্যক্রম শেষ না হতেই মঞ্জুর ও তার লোকজন এই ঘের দখল করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন।আবার সংখ্যা লঘু এসব পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা মামলা হয়রানি করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে মঞ্জুর হোসেন জানান, তিনি এই ঘেরের মালিক। এতদিন তিনি ওই ঘের হারি দিয়ে আসছিল। এখন তিনি নিজেই এই ঘের মাছ চাষ করবেন। সে কারণে তিনি তার ঘের দখলে নিয়েছেন।

ঘেরের প্রকৃত জমির মালিক রমজান আলী জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে এই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। মুনজুর একজন জালিয়াতি চক্রের সদস্য। জালিয়াতির মাধ্যমে সে এই জমি দাবী করছেন।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন জানান.এই ঘটনার সময় তিনি থানায় ছিলেন না। তিনি থাকলে এরকম ঘটনা ঘটত না। থানায় দুটি মামলা হয়েছে । এই জমি রমজান আলীর দখলে ছিল। জমি মুঞ্জুর দখলে নিয়েছে। তদন্ত শেষে মামলা দু’টির পুলিশ প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২১)