বগুড়া প্রতিনিধি : কাজের অধিকার, ন্যায্য মজুরি ও গণতান্ত্রিক শ্রম আইনসহ শ্রমিকের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে সমাজ পরিবর্তনের লড়াইয়ে পরিনত করার দাবি নিয়ে আজ (২২ জানুয়ারি) বগুড়ায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ৩৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচি পালিত হয়।

বগুড়া শহরের প্রধান প্রধান সড়কে মিছিল শেষে সাতমাথায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সভাপতি সাইফুজ্জামান টুটুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকনেতা মাসুদ পারভেজ, সহ-সাধারণ সম্পাদক সুরেশ চন্দ্র দাস মনো, সাংগাঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান, দপ্তর সম্পাদক শ্যামল বর্মন, প্রচার সম্পাদক সানোয়ার বাবু প্রমূখ ।

সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিক নেতা সাইফুজ্জামান টুটুল বলেন, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর শ্রমিকশ্রেণি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। একদিকে পুঁজিবাদী শোষণ অন্যদিকে করোনা মহামারির আক্রমণ শ্রমজীবীদের জীবনের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। করোনায় শ্রমিক হারিয়েছে কাজ, যাদের কাজ আছে তাদের মজুরি কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকের শ্রমের দাম কমলেও খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা খরচসহ শ্রমিক যা ব্যবহার করে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু মালিকদের প্রতি সরকারের সহায়তা, প্রণোদনা ও সুবিধা সবই বেড়েছে। মালিকদের বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংকের টাকা, বিদেশে টাকা পাচার সবই বাড়ছে। কিন্ত যে শ্রেমিকরা দেশের শিল্প বা কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করে জীবন দিচ্ছে; তারা তাদের সকল জীবনীশক্তি ক্ষয় করে উৎপানের চাকাকে সচল রাখছে, উন্নয়নের গতিকে ধরে রাখছে কিন্তু তারা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছেনা। তাদের থাকার ঘর নেই, তিন বেলা মানসম্মত খাবার জোটে না, তাদের রেশনের দাবি উপেক্ষিত। চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল নাই, সন্তানের লেখাপড়ার কোন ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থা চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না।

শ্রমিক নেতা মাসুদ পারভেজ বলেন, দেশের ৬ কোটি ৩৫ লাখ শ্রমিক কৃষি, শিল্প, সেবা খাতে কাজ করে। তাই মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৬ ডলার। তাহলে ৫ সদস্যের একজনের পরিবারের মাসিক আয় হওয়ার কথা ৭১ হাজার ৬০০ টাকারও বেশি। কিন্তু কোন শ্রমিক কি মাসে এই পরিমাণ টাকা আয় করতে পারে? গার্মেন্টস, চা, রি-রোলিং, তাঁত, পাটকল, পরিবহণ, হকার, রিকশা, দোকান কর্মচারীসহ বাংলাদেশের সকল সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরি পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে কম। দেশের রাষ্ট্রীয় পাটকল-চিনিকল বন্ধ করে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবণযাপন করছে। বগুড়া শহরে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা সাতমাথা অঞ্চল অতিক্রম করতে না পারায় তাদের আয় কমেছে ৫০ ভাগ, এ অবস্থার নিরসন অতি জরুুরি।

সমাবেশে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট তার জন্মলগ্ন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল খাতের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ ও সচেতন করার সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট মনে করে আন্দোলন সংগ্রামের পথেই গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, ন্যায্য মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আদায় এবং সুবিধাবাদী ট্রেড ইউনিয়নের বিপরীতে বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেখানে শ্রমিকদের সমস্যা সেখানেই সংগঠন এবং আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায় করতে হবে। আর এই শ্রমিক আন্দোলন জোরদার করতে নেতৃবৃন্দ শ্রমিক ফ্রন্টের পতাকাতলে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

(আর/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২১)