নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য সেবায় সারাদেশের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। তৃণমূল ও নির্ভূল পল্লী এলাকায় সরকারের স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে অনন্য উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ইতোমধ্যে অসহায় ও দুস্থ মানুষ ও শিশু এবং গর্ভবতী মাদের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্য সেবায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় দেশের মধ্যে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। 

জানা গেছে, গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সারাদেশের স্বাস্থ কমপ্লেক্সের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর একটি জরিপ চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগ। সারাদেশের ৪১৩টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রমের ওপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জরিপ চালানো হয়। এক থেকে দশটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্কোর ১৭.৪০ পয়েন্ট। এর মধ্যে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১৭.৪০ স্কোর পেয়ে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৮টি ইউনিয়নে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় মানুষ বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, গত বছর এ উপজেলায় যোগদানের পর স্বাস্থ্য বিভাগের সকল চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের সাথে বৈঠক করি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোড় গোড়ায় পৌঁেছ দিতে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গর্ভবতী মাদের স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব যাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে করা যায়, তার পুরো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর সুফল হিসেবে এ স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে এর মধ্যে ১৪ জন সিএইচসিপি মহিলা। ১৪ জনই ধাত্রী বিদ্যার ছয় মাসের কমিউনিটি স্কীল বার্থ এ্যাটেনডেন্ট ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এলাকার ছয় মাসের শিশুদের মায়ের বুকের দুধ পান এবং গর্ভবতী মাদের স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে কাউন্সিলিং অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই) শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব ক্লিনিকে নরমাল ভেলিভারী শুরু হয়েছে।

গত ডিসেম্বর মাসে উপজেলার ধামইরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড জয়জয়পুর গ্রামের ওমর ফারুক বলেন, তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ববির (২৭) প্রসব ব্যথা শুরু হয়ে তাৎক্ষনিক নেউটা কমিউনিটি ক্লিনিকে নেয়া হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম লাভ করে। এছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একই কমিউনিটি ক্লিনিকে নেউটা গ্রামের রাজিয়া সুলতানা নামে এক মায়ের স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসব সম্পন্ন হয়।

এ ব্যাপারে নেউটা গ্রামের মোশারফ হোসেন বলেন, বাড়ির কাছে কোন খরচ ছাড়াই নিরাপদে গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসব নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বড় অর্জন। তাছাড়া আমরা গবীর মানুষ বাড়ির কাছে এসব ক্লিনিকে এখন অনেক ওষুধ ও সেবা পাওয়া যাচ্ছে। যা আমাদের জন্য ভালো খবর।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ধামইরহাট স্বাস্থ্য বিভাগের এ অর্জন নিঃসন্দেহে একটি ভালো খবর। গর্ভবতী মা, শিশু ও সকল বয়সের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সেবা গ্রহণ করলে মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কম থাকে। আমরা সকল মাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে বাচ্চা প্রসবের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ উপজেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যাতে গর্ভবতী মা বাচ্চা প্রসব করতে পারেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

(এসবি/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২১)