রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতে দেওয়ানী ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা থাকার পরও জবরদখলকারির জামায়াত কর্মীর পক্ষ নিয়ে পুলিশ এক সংখ্যালঘুর জমি চাষ বন্ধ করে দিয়ে তার মালিকসহ তার পাওয়ার ট্রিলার আটক করেছে।

শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিষ্ণুপুর গ্রামের সঞ্জয় সরদার জানান, তিনি বিষ্ণুপুর মৌজায় পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত প্রায় সাত বিঘা জমি বংশপরম্পরায় ভোগদখলীকার ছিলেন। পরবর্তীতে ওই জমি খাস হলে পরবর্তী বন্দোবস্ত দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে জামায়াত কর্মী আবু আসলাম লাল্টু মৌখিকভাবে নিয়ে বর্তমান জরিপে ভাই আকরাম হোসেন দোলনের নামে রেকর্ড করায়। তবে রেকর্ডে দখল স্বত্ব তার নামে থাকে। ওই জমি আকরাম হোসেনের পক্ষে তার ভাই জামায়াতের সক্রিয় কর্মী আবু আসলাম লাল্টু দখল করার চেষ্টা করলে তিনি বাদি হয়ে বাংলাদেশ সরকার, আকরাম হোসেনসহ ৩২ জনকে বিবাদী করে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেওয়ানী মামলা করেন। এরপরও আবু আসলাম ও আকরাম ওই জমি জবরদখল করার চেষ্টা করলে তিনি এডিএম কোর্টে মামলা করলে আদালতের রায় তার পক্ষে যায়। এর পরপরই একই আদালতে একই জমি নিয়ে লাল্টু বাদি হয়ে মামলা করলে তদন্ত প্রতিবেদন লাল্টুর বিপক্ষে যায়। এরপর লাল্টু বাদি হয়ে সঞ্জয়সহ দু’জনের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা করেন। তাতে মিথ্যা সাক্ষী দেন বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ও গ্রাম পুলিশ আব্দুল্লাহ।

সঞ্জয় সরদার আরো বলেন, আবু আসলাম লাল্টু, আকরাম হোসেন দোলনের নেতৃত্বে জামায়াত ও বিএনপি নেতা কর্মীরা গত ২ জানুয়ারি তার দখলীয় জমির একাংশে বেড়া ও নেট দিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দেওয়ায় তাকেসহ চারজনকে মারপিট করে আহত করে। বিষয়টি উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক মাসিক সভায় উপস্থাপিত হওয়ায় ৩ জানুয়ারি কালিগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী, বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান প্রশান্ত সরকার ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে লাল্টু ৪ জানুয়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে ঘেরা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতিশ্রুতি পালন না করায় ৭ জানুয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনের নির্দেশে গ্রাম পুলিশ ঘেরা তুলে দেয়।

সঞ্জয় সরদার অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার সকালে তিনি পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছিলেন। এ সময় সাতজন শ্রমিকও কাজ করছিল। সকাল ১১ টার দিকে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী ও উপপরিদর্শক আনোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ এসে শ্রমিকদের ক্ষেত থেকে তুলে দেয়। একইসাথে তাকে উদ্দেশ্য করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী। পরে পাওয়ার টিলারটি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের জিম্মায় রেখে মালিক বিশ্বজিৎ মণ্ডলকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিনকে জানালে তিনি থানায় কথা বলতে পরামর্শ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন।

জানতে চাইলে বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজউদ্দিন বলেন, সঞ্জয় জমি চাষ করতে থাকায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে নিষেধ করতে বলেন। একপর্যায়ে উপপরিদর্শক জিযারত আলী পাওয়ার ট্রিলারটি তার জিম্মায় রেখে মালিককে থানায় নিয়ে যায়। তবে ৭ জানুয়ারি ঘেরা তুলে দেওয়ার সময় বসাবসির কোন শর্ত ছিল বলে তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী বলেন, তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে পাওয়ার ট্রিলারটি চেয়ারম্যানের জিম্মায় রেখে মালিককে থানায় এনে তারজ কক্ষে বসিয়ে রেখেছেন।

জানতে চাইলে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন এর সঙ্গে শুক্রবার সাড়ে ১১টার পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কয়েক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোর রিসিভ করেননি।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২২, ২০২১)