নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মান্দায় প্রশাসনের নাকের ডগায় বোরো ধানের একটি মাঠজুড়ে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে দুটি এস্কেভেটর (ভেকুমেশিন) দিয়ে উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের মাউল মাঠে এ খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। জমির মালিকদের প্রলোভন দিয়ে ওই মাঠের প্রায় দুইশ’ বিঘা ধানী জমিতে খননকাজ করছে স্বার্থান্বেষী একটি চক্র। 

বিলের আবাদি জমিতে এভাবে পুকুর খনন করা হলে প্রত্যেক মৌসুমে অন্তত: ৬ হাজার মণ বোরো ধানের উৎপাদন চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে পড়বেন বিল কেন্দ্রীক কয়েকটি গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মৎস্যজীবী পরিবার। ভূমি আইন লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে আবাদি জমি খনন করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছেন। এনিয়ে এলাকাবাসির মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বানইল গ্রামের আব্দুল বারিক ও সামসুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তি মাউল মাঠের প্রায় দুইশ’ বিঘা ধানী জমি প্রতিবিঘা ২০ হাজার টাকা করে বাৎসরিক চুক্তিতে লিজ নেন। এরপর রাজশাহীর কেশরহাট এলাকার সোহেল রানা নামে আরেক ব্যক্তির সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার থেকে এস্কেভেটর দিয়ে সেখানে খনন কাজ শুরু করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, গ্রামের লোকজনের বাধা উপেক্ষা করে খননকাজ অব্যাহত রাখা হয়েছে। কাজটি সমাপ্ত করা হলে এলাকার প্রায় দুইশ’ বিঘা আবাদি জমি কমে যাবে। চিরদিনের মতো বন্ধ হয়ে যাবে ৬ হাজার মণ বোরো ধানের উৎপাদন। তারা আরও বলেন, এ বিলকে ঘিরে পুকুরিয়া, মাউল ও টেপড়া গ্রামের একটি বৃহৎ অংশ মৎস্যজীবী পেশার সঙ্গে জড়িত। বিলটি অবরুদ্ধ হলে বেকার হয়ে পড়বে এসব গ্রামের মৎস্যজীবীরা।
মাউল গ্রামের মৎস্যজীবী বিপ্লব চন্দ্র হালদার, নিতাই চন্দ্র হালদার, বিক্রম কুমার হালদারসহ আরও কয়েকজন জানান, বোরো ধান কেটে নেয়ার পর পুরো মাঠ ফাঁকা অবস্থায় পড়ে থাকে। বর্ষা শুরু হলে বিলে পানি জমে প্রচুর পরিমাণ বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় মাছের উৎপাদন হয়।

এ সময় এলাকার কয়েক গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মৎস্যজীবী পরিবার বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। বিলটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে এসব মৎস্যজীবীরা বছরের ৬ মাস বেকার হয়ে পড়বেন। আয়ের পথ বন্ধ হলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চরম অর্থ কষ্টে পড়তে হবে তাদের।
পুকুর খননকারী রাজশাহীর বানইল গ্রামের আব্দুল বারিক জানান, মালিকদের নিকট থেকে বাৎসরিক চুক্তিতে জমি লিজ নিয়ে সেখানে পুকুর খনন করা হচ্ছে। খননকাজে ঝামেলা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন জানান, বিলজুড়ে আবাদি জমিতে পুকুর খনন করা হলে কৃষিতে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে। কোনো ভাবেই সেখানে পুকুর করতে দেয়া সঠিক হবে না। তবে, ম্যানেজ হওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইমরানুল হক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০২১)