বাগেরহাট প্রতিনিধি : মোংলা বন্দর জেটিতে ভিড়া দুইটি বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। বন্দরের পশুর চ্যানেলের জেটির সম্মুখভাগে নাব্যতা কম থাকায় একটি জাহাজ কাত হয়ে পড়েছে, অপরদিকে জেটিতে রাবারের বয়া (প্যানডার) না থাকায় আঘাতে আরেকটি জাহাজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ জাহাজের ক্যাপেন্ট বন্দর চেয়ারম্যান ও হারবার মাষ্টারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জাহাজ দুইটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট জানায়, পাথর বোঝাই এমভি তুহিনা নামের বিদেশী জাহাজটি গত ১৮ জানুয়ারী মোংলা বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়ে। জেটিতে থাকা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সেখানে নাব্যতা সংকটের কারণে জাহাজটি দুইটি মুরিংরোপ ছড়ি গিয়ে ওই জাহাজটি কাত হয়ে পড়ে। জাহাজটি কাত হয়ে যাওয়ায় ওই জাহাজটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট আল সাফা শিপিং লাইন্সের খুলনাস্থ ম্যানেজার সাধন কুমার চক্রবর্তী বলেন, বন্দর জেটির সম্মুখভাগে ৭ মিটার গভীরতা রয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের ঘোষণা রয়েছে। কিন্তু জাহাজটি সেখানে রাখার পর দেখা গেছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ মিটার গভীরতা রয়েছে। যার ফলে ভাটার সময় জাহাজটি কাত হয়ে যায়। এতে জাহাজের ক্যাপ্টেন আমাদেও এবং বন্দর চেয়ারম্যান ও হারবার মাষ্টারকে ‘লেটার অফ পোর্টেস্ট’ (অভিযোগ) করেছে।

অপরদিকে রুপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্রের মেশিনারী নিয়ে এমভি ইউএইচএল ফোকাস নামের জাহাজটি বৃহস্পতিবার ৯ নম্বর জেটিতে ভিড়ার সময় জেটির বাহিরের অংশে রাবারের বয়া (প্যানডার) না থাকায় আঘাত ও ঘষায় জাহাজটির বাহিরের অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিপিং এজেন্ট অলসিস এর স্থানীয় প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন মিলন বলেন, ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ করে এই জাহাজের ক্যাপ্টেনও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ (লেটার অফ পোর্টেস্ট) দিয়েছেন।

মোংলা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে বন্দরের ৭ ও ৯ নম্বর জেটি এলাকায় ড্রেজিং করা হয়েছে। মাত্র ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ড্রেজিং এলাকা কিভাবে ভরাট হয়ে যায় এবং নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়ে এ নিয়ে নানা অভিযোগও রয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে। তারা বলেন, সঠিকভাবে এবং সময় মত ড্রেজিং করা হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন বন্দর ব্যবহারকারীরা বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে ৫ নম্বর জেটি এলাকায় ড্রেজিং শেষে সিভিল ও হাইড্রোলিক বিভাগ হারবার বিভাগকে জেটি এলাকার আর কোথাও ড্রেজিয়ের প্রয়োজনীতা রয়েছে কিনা জানতে চেয়ে চিঠি দেন। সেই চিঠির জবাবে হারবার বিভাগ ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীতা নেই বলে উত্তর দেন। কিন্তু সেই সময় যদি ড্রেজিং করা হতো তাহলে বিদেশী জাহাজটি দুইটি এভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও ক্ষতির সম্মুখীন হতো না। এমতাবস্থায় বর্হি:বিশ্বে মোংলা বন্দরের সুনাম ক্ষুন্নের পাশাপাশি বিদেশী জাহাজ মালিকেরা এ বন্দরে জাহাজ আনায় অনিহা প্রকাশ করছেন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীরা। এ দুর্ঘটনার জন্য বন্দরের হারবার বিভাগকেই দোষছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।

এদিকে হারবার মাষ্টার প্রথমে ড্রেজিংয়ের ব্যাপারে বিরোধীতা করলেও জাহাজ দুর্ঘটনার দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে ওই এলাকায় ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিভিল ও হাইড্রোলিক বিভাগে চাহিদা জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বন্দর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানান প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

নাব্যতা সংকটের কারনে জাহাজ কাত হয়ে পড়ার ঘটনার বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার ফখরউদ্দিন বলেন, এমভি তুহিনা জাহাজের ক্যাপ্টেন অভিযোগ দিয়েছে তার জাহাজের তলদেশ মাটিতে আটকে যাচ্ছে, ভাটার সময়ে। ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছি সিভিল ও হাইড্রোলিক বিভাগকে। সেই অনুযায়ী তারা কাজও করেছেন আজ কিংবা আগামীকাল জেটি এলাকায় নতুন করে ড্রেজিংয়ে কাজ শুরু হবে।

অপরদিকে জেটিতে রাবারের বয়া (প্যানডার) না থাকায় এমভি ইউএইচএল ফোকাস নামের জাহাজটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, যা আছে সেভাবেই চলছে মোংলা বন্দর। জেটিতে রাবারের বয়া (প্যানডার) লাগানো বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

(এসএকে/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০২১)