রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র উপেক্ষা ও রেজুলেশন জালিয়াতির মাধ্যমে সাতক্ষীরা সদরের ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, এমপিও ভুক্তিকে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে শেখ শরিফুল ইসলাম সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে এক অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সাতক্ষীরার ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজের শিক্ষকের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি আদর্শইশক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কলেজটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হন যুদ্ধাপরাধী মামলার আসামী জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আব্দুল খালেক। তিনি সভাপতি হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্বেও ডিগ্রী স্তরের সাতজন শিক্ষককে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্ত করান।

ওই শিক্ষকরা হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মোঃ আব্দুল আলিম, বাংলা বিভাগে মনোরঞ্জন কুমার , ইতহাস বিভাগে রাশিদা ইয়াসমিন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগে শামীম হাসান, দর্শণ বিভাগে আঞ্জুন নাহার, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে মোঃ আব্দুস সবুর, ভুগোল বিভাগে মোঃ খায়রুল বাসার। এরপর মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি থাকাকালিন ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিএনপি নেতা ছফুরুন্নেছা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি বিতর্কিত এক নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান।

এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ওই সালের নভেম্বর মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

২০১৮ সালের মে মাসে ডিগ্রী কোড পাওয়ার পর বর্তমান অধ্যক্ষ মোবশ্বেরুল হক জ্যোতি তথ্য জালিয়াতি, ভুয়া শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ , জনবল কাঠামো নীতিমালা ,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর, ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট ও ২০১৯ সালের ১২ মার্চ জারিকৃত পরিপত্র উপেক্ষা করে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অনার্স শাখায় নিয়োগপত্র শিক্ষকদেরকে ডিগ্রী স্তরের ২য় ও ৩য় শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন বিষয়ে ১৫ জন শিক্ষকসহ জামায়াত নেতা উপাধ্যক্ষ মোঃ ওবায়দুল্লাহকে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত করেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বাসুদেব কুমার সিংহ (সিনিয়র শিক্ষক শেখ শরিফুল ইসলামকে বঞ্চিত করে), হিসাব বিজ্ঞানে মো আব্দুল ওয়াহেদ ও এএনএস মাগফুরুল হক, ইংরেজিতে মোঃ ইকবাল হোসেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগে মোঃ মিজানুর রহমান, ইসলামের ইতিহাসে মোঃ সিরাজুল ইসলাম, ইসলামী শিক্ষায় মোঃ মামুনুর রহমান ও মোঃ অলিউল ইসলাম, দর্শণে মোঃ আল মামুন রেজা, সমাজ বিজ্ঞানে উম্মে কুলসুম শারমিন ও জিএম জাহাঙ্গীর হোসাইন, ভুগোলে নাজমুল হক, অর্থনীতিতে জামিনী কুমার মণ্ডল, ইতিহাসে মোঃ মালেকুজ্জামান ও গ্রন্থাগারিক রহিমা খাতুন(সনদপত্রে শ্রেণী জালিয়াতি)।

পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর, ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট ও ২০১৯ সালের ১২ মার্চ জারিকৃত পরিপত্র উপেক্ষা করে বাংলঅ ইংরেজী, ব্যবস্থাপনা ও অর্থনীতি বিষয়ে চারজন শিক্ষককে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। বাজারের সর্বোচ্চ রেট হিসেবে ইতিমধ্যে কয়েকজনের কাছ থেকে আর্থিক লেনদেন শুরু হয়েছে মর্মে প্রচার রয়েছে।

জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদরের ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ তার প্রতিষ্ঠানে কোন অনিয়ম ও দূর্ণীতির কথা অস্বীকার করে বলেন, তদন্ত হলে সব সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০২১)