পটুয়াখালী প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরী স্থাপন না করেই চূড়ান্ত বিল উত্তোলন ও ঠিকাদার নিয়োগে পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী জানান ঠিকাদার স্থানীয় এমপি’র সহদর বলে নিয়মশিথিল করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ চত্বরে ও উপজেলা প্রকৌশল দপ্তরের ১০ গজ দূরে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নির্মাণ হবার কথা বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গঠনের জন্য জাতীয় আদর্শ শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মরণে লাইব্রেরী নির্মাণ কাজ এখনো অদৃশ্য। একতলা ভবনের ছাদের কাজ চলমান অবস্থায় দিনে নির্মিত সিড়ি রাতে ভেঙে দেয়ার ঘটনায় নির্মাণ কৌশল নিয়ে অসন্তোষ এলাকাবাসীর।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের অফিস আদেশ ৪৬.০৪৫.২০.০০৯.১০.০১০.২০১৯-৬২১ তারিখ ০৮.০৮.২০১৯ ইং মোতাবেক ১ম কিস্তিতে ২৬ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। উপজেলা পরিষদে গত বছরের ২৬ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত মাসিক সভায় ‘দশমিনা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ডিজটাল লাইব্রেরী’ ভবন নির্মাণে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া গ্রহণ না করে ওই বছরের জুন মাসে অর্থ আটকে রাখতে কাগুজেকর্ম সম্পাদন দেখিয়ে চুড়ান্ত বিল উত্তেলান করা হয়। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরী স্থাপনের নামে অর্থলোপাট স্থানীয়দের অভিযোগ সরব হয়ে উঠলে গত সপ্তাহে নির্মাণ কাজ শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

নির্মাণকাজ তদারকীর দায়িত্বে থাকা উপ-প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন জানান, একই কাজ তিন ঠিকাদার মিলে করায় ডিজাইন বর্হিভূত একটি সিড়ি নির্মাণ করার পরে ভেঙে ফেলেছে। বর্তমানে স্থানীয় এমপি’র ছোটভাই মোঃ সুমন সরদার কাজটি বাস্তবায়ন করছে। একই কাজে তিন ঠিকাদার নিয়োগ বিষয়ে তিনি জানান, স্বত্তাধিকারী এস.এম সুমন’র মেসার্স ছোহা ট্রেডার্স ১০ লক্ষ, মোঃ কামরুল খন্দকার’র মেসার্স খন্দকার কনষ্ট্রাকশন ১০ লক্ষ ও এস.এম মামুন’র মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজ নামে ৫ লক্ষ টাকাসহ মোট ২৫ লক্ষ টাকার কাজ সম্পন্ন করবে।

নির্মাণ শুরুতেই সিড়ি ভেঙে নেয়া ও কাজ শুরুর ৬মাস পূর্বে বিল উত্তোলন বিষয়ে কোন তদবির বিষয়ে তিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সমন্বকারী এস.এম সুমন বলেন, স্থান নির্বাচন জটিলতায় কাজ শুরু করা যায়নি। ডিজাইন বর্হিভূত সিড়িটি ভেঙে নিয়েছি। বিল উত্তোলন ও কাজ পাইয়ে দেয়ার বিষয়ে স্থানীয় এমপি’র সম্পৃক্ততা নেই।

কাজ না করেই চুড়ান্ত বিল উত্তোলন ও ঠিকাদার নিয়োগ পদ্ধতি বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মকবুল হোসেন বলেন, আমি গত বছরের ২ জুলাই যোগদান করেছি। ১০ লক্ষ টাকার অধিক মূল্যের ভৌতিক অবকাঠামো নির্মাণে সরাসরি দরপত্র পদ্ধতি গ্রহণের নির্দেশ থাকায় ২৫ লক্ষ টাকার নির্মাণ রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) করতে তিনটি অংশ ভাগ ঠিকাদার নিয়োগ করেছে। কাজ না করে চুড়ান্ত বিল উত্তোলন ঘটনা পূর্বের উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম ও আরএফকিউ কমিটি ভাল বলতে পারবে।

ঠিকাদার নিয়োগ যথাযথ হয়েছে কিনা প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের তিনি জানান, সর্বশেষ বাংলাদেশ গেজেট পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালার ভ্যন্তরীণ ক্রয় ৬৯(৪) এর (ক) অনুসারে বৃহদাকার চুক্তিকে ক্ষুদ্র অংশে ভাগ করা যাবেনা বলা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা আরএফকিউ মূল্যায়ন কমিটি বিধি ৬৯(৬) এর (ক) ও (গ) অনুসারে খুরচা যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ঠিকাদার নিয়োগ পদ্ধতি গ্রহণ করায় যথাযথ হয়নি।

তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারগণ স্থানীয় এমপি’র সহদর ও স্বজন তাই আমার চেয়ে উপজেলা আরএফকিউ মূল্যায়ন কমিটি কিভাবে কাজটি করেছে তারাই ভাল বলতে পাারবেন।

অভিযোগের বিষয়ে সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী বর্তমানে একই আসনের গলাচিপা উপজেলায় কর্মরত মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মুঠোফোনে জানায়, গত অর্থবছরের শেষ সময়ে বদলী ঠিঠি পাওয়ায় আমার সময়ের সকল কাজে স্বাক্ষর করে ‘বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল লাইব্রেরী’ স্থাপনের ২৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছি। সরাসরি দরপত্র পদ্ধতিতে না গিয়ে কোটেশন পদ্ধতির পরামর্শ উপজেলা কোটেশন মূল্যয়ন কমিটি মিলে করেছে।

উপজেলা আরএফকিউ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ তানিয়া ফেরদৌস বলেন, বিল উত্তোলনের কথা শুনেছি। প্রকল্পটি বাস্তাবায়নে আমার সীল ব্যবহার করা হলেও আমার স্বাক্ষর নেয়া হয়নি। আমার স্বাক্ষর ছাড়া বিল উত্তোলন ঘটনায় আমি বিস্মিত।

(এনসি/এসপি/জানুয়ারি ২৬, ২০২১)